সাম্প্রতিক

সুইসাইড ফরেস্ট: রহস্যময় অভিশপ্ত জঙ্গল আওকিগাহারা

সাম্প্রতিক মঙ্গলবার, ০১ মে ২০১৮ ০১:৪৮:২০

পৃথিবীতে এমন কিছু রহস্যময় স্থান আছে যেগুলোর কথা জানলে ও শুনলে আমরা অবাক হই এবং সেগুলোর প্রতি আমাদের জানার আগ্রহ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। আজ তেমনি একটি অভিশপ্ত জঙ্গল  সম্পর্কে জানব, যেটি জাপানের মাউন্ট ফুজি পাহাড়ের উত্তর পাদদেশে অবস্থিত। এই সুবিশাল বনটির গাছগুলোর ঘনত্ব এত বেশি যে, এর মধ্যে একবার ঢুকলে নিশ্চিত পথ হারিয়ে ফেলবে।  এই জায়গাটির নেপথ্যের কথা জানলে অবাক হতে হয় যে এখানে মানুষ আসে শুধুমাত্র আত্মহত্যা করার জন্য।

এই রহস্যময় অভিশপ্ত জঙ্গল এর নাম আওকিগাহারা।এটি পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় স্থান, যার কারন আজ পর্যন্ত জানতে পারেননি পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীরা। আওকিগাহারা একটি বন যেটি মাউন্ট ফুজির পাদদেশে এবং টোকিও শহর থেকে ১০০ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত। স্থানীয়দের কাছে জঙ্গলটি “জুকাই” নামে পরিচিত। স্থানীয়দের ভাষায় জুকাই শব্দের অর্থ “গাছের সাগর”। আওকিগাহারা সুইসাইড ফরেস্ট নামেও পরিচিত যার আয়তন ৩৫ বর্গ কিলোমিটার। এই বনে আত্মহত্যা শুরুর ইতিহাসটা বেশ পুরনো। ১৯৫০ সাল থেকে হিসেব  শুরু হয়ে এখনও পর্যন্ত পাঁচশরও অধিক আত্মহত্যার ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায় এই বনে।  দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এখনও পর্যন্ত এই জঙ্গলে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ১৯৬০ সালে জাপানি লেখক সেইচো মাতসুমোতোর ‘কুরোই জুকাই’ নামে একটি উপন্যাস বের হয়। সেই গল্পে প্রেমিক-প্রেমিকার বিচ্ছেদের করুণ কাহিনীর সমাপ্তি ঘটে এই আওকিগাহারা জঙ্গলে। উপন্যাসটি সেই সময় জাপানি সংস্কৃতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। প্রেমে ব্যর্থ যুবক-যুবতীরা নিজেদের শেষ করতেই এসে উপস্থিত হয় এই জঙ্গলে।


স্থানীয়দের মাঝে কিছু বিতর্কিত মতামত রয়েছে। তাদের মতে, আত্মহত্যা বা ইচ্ছামৃত্যুর শুরু আজ হতে অনেক বছর আগে। সেসময় জাপান এখনকার মতো এত সম্পদশালী ও প্রভাবশালী দেশ ছিল না। দুর্ভিক্ষ নেমে এসেছিল জাপানের বিভিন্ন জায়গায়। ফলে অনেক পরিবারেই নেমে আসে প্রচণ্ড দুর্ভোগ। অনাহারের থাকতে না পেরে, এই কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক সদস্যদের ছেড়ে দেওয়া হতো এই বনে। যাদের বনে রেখে আসা হতো, তারা স্বাভাবিকভাবেই না খেতে পেয়ে কিছুদিন পর মারা যেত অথবা বনের হিংস্র পশুর শিকার হতো। তাই স্থানীয়দের ধারণা, এই অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায় এই অভিশপ্ত জঙ্গলে। বনের ভেতর ঢুকে পড়া মানুষদের নাকি মেরে ফেলে এই আত্মাগুলো, তবে এগুলো স্থানীয় লোকদের কল্পিত ভাবনা বলে মনে করেন অনেকে।

স্থানীয় লোকদের কেউ এই জঙ্গলে যেতে রাজি হয় না। জঙ্গলের ভেতরে এদিক সেদিক তাঁবুর ভগ্নাংশ, ছেঁড়া কাপড়, দড়ি ইত্যাদির অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়। আত্মহত্যার জন্য আওকিগাহারা এখন এতটাই পরিচিত যে কর্তৃপক্ষ এই বনাঞ্চলে ঢোকার মুখেই বড় একটি নোটিশ ঝুলিয়েছে, “দয়া করে আরেকবার ভাবুন, যদি সত্যিই কোনো সমস্যা থাকে অথবা ঝামেলায় পড়েন, পুলিশের সাহায্য নিন। মৃত্যুর আগে দয়া করে আরেকবার নিজের কথা ভাবুন”। তবে নোটিশ বোর্ডকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বনের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে। বনের আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, যারা আত্মহত্যা করতে আসে, তারা আগে থেকেই ঠিক করে আসে জীবনের ইতি টানবে এখানেই। নোটিশ বোর্ডের দিকে ফিরে তাকানোর প্রয়োজনই মনে করে না তারা।