ব্যাক্তিত্ব

আফ্রিকান লৌহমানব গাদ্দাফির অজানা ইতিহাস

ব্যাক্তিত্ব সোমবার, ০৮ জুলাই ২০১৯ ০৬:২১:২০

১৯৬০ সালে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ পশ্চাৎপদ দেশ লিবিয়ার মসনদে আসীন হোন প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফী। আফ্রিকান লৌহমানবের ৪২ বছরের শাসনে লিবিয়া এক গরিব দেশ থেকে হয়ে উঠেছিল সমীহ জাগানিয়া আফ্রিকান ঘোড়া। গাদ্দাফির অদ্ভুত পোশাক আশাক আর ইস্পাত কঠিন ব্যক্তিত্ব তাকে পরিণত করেছিল একজন স্বৈরশাসক হিসেবে।

পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সম্পর্ক ভাল ছিল না গাদ্দাফির। ফলাফল হিসেবে ২০১১ সালে শুরু হওয়া আরব বসন্তের কোপানলে পড়ে ক্ষমতা ও প্রাণ দুই-ই হারাতে হয় গাদ্দাফিকে। তার উত্থান ছিল বিস্ময়ে ভরা। তার লাইফস্টাইলও ছিল আগ্রহ জাগানিয়া। আফ্রিকান লৌহমানবের অজানা কিছু দিক পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।

শৈশবে গাদ্দাফি ছাগল চরাতেন

গাদ্দাফির বেদুইন গোত্রের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না৷ উট আর ছাগল লালনপালন করাই ছিল তাদের মূল অবলম্বন। তাই গাদ্দাফিকেও ছাগল চরাতে হত। গাদ্দাফি প্রেসিডেন্ট থাকাকালে  একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তার শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে  গিয়ে কেঁদে দেন।

গাদ্দাফি মারা যাওয়াকালে বিশ্বের সেরা ধনী ছিলেন

গরিব বেদুইন গোত্র থেকে উঠে আসা আফ্রিকান লৌহমানব যখন মারা যান তখন তিনি ছিলেন সমকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধন্য ব্যক্তি। ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের সম্পদে তিনি ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন বিল গেটস, ওয়ারেন বাফেটের মত হালের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের।

৯/১১ এর আগে লাদেনকে মোস্ট ওয়ান্টেড ঘোষণা করেছিলেন গাদ্দাফি

টুইন টাওয়ার হামলার মূল হোতা আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে পাকড়াও করতে বেশ বেগ পোহাতে হয় আমেরিকাকে। শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালে পাকিস্তানের এবোটাবাদে তাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু নাইন ইলেভেনের তিন বছর আগেই লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফি ওসামা বিন লাদেনকে মোস্ট ওয়ান্টেড হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই গাদ্দাফিকেই পশ্চিমারা আবার সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক দাবি করেছিল।

গাদ্দাফির এমাজনিয়ান গার্ড

গাদ্দাফির ব্যক্তিগত দেহরক্ষী হিসেবে ৪০ জন নারী সদস্য ছিল। এই দলটিকে বলা হত গাদ্দাফির এমাজনিয়ান গার্ড। এমাজনিয়ান গার্ডের সদস্য হিসেবে অধিভুক্তির প্রধান শর্ত ছিল তাকে নারী হতে হবে এবং অবশ্যই কুমারী।

প্রথম দশকেই লিবিয়ার জিডিপি ৬০০ শতাংশে উন্নীত করেন গাদ্দাফি!

ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক নামের ত্রিদেশীয় জোট থেকে গাদ্দাফি বেরিয়ে আসেন অপর দুই দেশ মিশর ও সিরিয়ার সাথে বনিবনা না হওয়ায়। এর অব্যবহিত পরেই তিনি তার দেশের অভ্যন্তরীণ সংস্কারে হাত দেন। প্রথমেই তিনি লিবিয়ার তেলক্ষেত্রগুলোর জাতীয়করণ করেন। তিনি দেশীয় অর্থ সাধারণের জন্য এবং শিক্ষাখাতে ব্যয় করেন এবং দেশীয় সম্পদ নিম্নবিত্তের মধ্যে ভাগ করে দেন। ১৯৬৯ সালে যেখানে লিবিয়ার  মোট জিডিপি ছিল ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ১৯৭৯ তে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

গাদ্দাফির গ্রিনবুক!

লিবিয়ার উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটার সাথে গাদ্দাফিও একজন সফল উন্নয়নের রূপকারে পরিণত হন। তখন তিনি হয়ে উঠেছেন একজন স্বৈরশাসক। লিখেন তিন খন্ডের এক বই-গ্রিনবুক। এই বইতে তিনি গণতন্ত্র, পুঁজিবাদ এবং পরিবারের সমস্যার সমাধান বাতলে দেন। অপরাপর স্বৈরশাসকের মত গাদ্দাফি প্রত্যেক লিবিয়ানদের যেকোন পরিস্থিতিতে এই বই সাথে রাখার বাধ্যতামূলক নিয়ম জারি করেন।

গাদ্দাফির উচ্চতা ভীতি ছিল

গাদ্দাফি বাইরের দেশে গেলে নিজের সাথে এক বিশাল আকারের তাঁবু রাখতেন। প্রায় এক হোটেল সমান আয়তনের এই তাঁবুর পেছনে ছিল গাদ্দাফির উচ্চতাভীতি। পারতপক্ষে তিনি ফ্লাইট এড়িয়ে চলতেন এবং খুব বেশি দরকার না পড়লে লিফটও ব্যবহার করতেন না। এছাড়া তিনি এক জায়গায় ৩৫ কদমের বেশি পা ফালাতেন না।


তথ্যসূত্র
https://allthatsinteresting.com/muammar-gaddafi-facts#14

https://www.kickassfacts.com/20-facts-about-muammar-gaddafi/

লেখকঃ উবায়দুর রহমান রাজু