
বাংলা ভাষায় রচিত মুদ্রিত প্রথম উপন্যাস 'ফুলমণি ও করুণার বিবরণ'
'ফুলমণি ও করুণার বিবরণ'- এটি লিখেছিলেন একজন ইংরেজ। তাঁর নাম হানা ক্যাথরিন ম্যুলেন্স। বইটি কলকাতা হতে ১৮৫২ সালে প্রকাশিত হয়। পরে এটির একটি ইংরেজী ভার্সনও বের হয়। সেটির নাম ছিল Faith and victory: a story of the progress of Christianity in Bengal.সেটি ১৮৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র হতে প্রকাশিত হয়েছিল। এ বইটি পরে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র হতে Life by the Ganges নামেও প্রকাশিত হয়েছিল। শোনা যায় যে, এ বইটি বারটি ভাষায় অনূদিত হয়েছিল। আমরা বরাবর জেনে এসেছিলাম টেক চাঁদ ঠাকুরের (মূল নাম প্যারীচাঁদ মিত্র) 'আলালের ঘরের দুলাল'ই বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম উপন্যাস। সেটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৫৭ সালে। কিন্তু 'ফুলমণি ও করুণার বিবরণ' প্রকাশিত হয় ১৮৫২ সালে।
হানা ক্যাথরিন ম্যুলেন্স সম্পর্কে কিছু তথ্যও আমরা প্রসংগক্রমে জেনে রাখি। ক্যাথরিনের জন্ম ১ জুলাই ১৮২৬, কলকাতার চুঁচুড়ায় । তাঁর পিতা ছিলেন আলফোনসে ফ্রঁসোয়া লা ক্রইক্স, সুইস অরিজিন এ ভদ্রলোক লন্ডন মিশনারি সোসাইটির হয়ে কলকাতায় এসেছিলেন। ক্যাথরিনের শৈশবের লেখাপড়া বাড়িতেই হয়েছিল। পরে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বাংলা ভাষাতেই হয়েছিল। তাঁর বাংলা দক্ষতা এত ভাল ছিল যে, সে ১২ বছর বয়সেই ভবানীপুরে মিশন স্কুলে বাংলার শিক্ষিকা হিসেবে কাজ শুরু করে। ১৫ বছর বয়সে ক্যাথরিন লন্ডনে লেখাপড়ার জন্যে যান এবং বাংলায় ফিরে এসে ১৮৪৫ সালে জে মুলেন্স এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মুলেন্স তখন ভবানীপুরে ক্রিশ্চিয়ান ইনিস্টিটিউটের সুপারিন্টেন্ডেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে এ লেখিকা ২১ নভেম্বর, ১৮৬১ সালে পরলোকগমন করেন।
এ উপন্যাসটি ফুলমণি ও করুণা,দুজন এংলো ক্রিশ্চিয়ানের জীবন নিয়ে লেখা। ফুলমণি গুছানো স্বভাবের মেয়ে, পরিশ্রমী এবং ধর্মানুরাগী; তার স্বামী এক সাহেবের কাছে অল্প বেতনে চাকুরী করে। আর করুণা, ফুলমণির বান্ধবী; একই গ্রামেই বসবাস, । সে অলস, তামাক খায়, অপরিচ্ছন্ন ধরণের মানুষ। করুণার স্বামী অলস, মদ খায় আর বৌকে পিটায়। তারা কোন গ্রামে থাকে সে গ্রামের নাম লেখিকা উপন্যাসে উল্লেখ করেননি। তার ভাষায় সেটি ভারতবর্ষের সাধারণ একটি গ্রাম। মোট ১০ অধ্যায়ে রচিত উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশের সময় তিন হাজার কপি মুদ্রিত হয়েছিল।
ছবিটি বিডিনিউজ২৪ এর সৌজন্যে।
অপরাপর তথ্যসমূহ উইকিপিডিয়া, ডেইলি স্টার এবং বাংলাপিডিয়া হতে নেয়া।
লেখকঃ বোরহান মাহমুদ