অন্যান্য

বিশ্ববিখ্যাত চিত্রকর্ম 'মোনালিসা' নিয়ে কিছু অজানা তথ্য

অন্যান্য শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ১০:১২:১৩

এ পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত চিত্রকর্মগুলোর মধ্যে নিঃসন্দেহে অন্যতম একটি চিত্রকর্ম ‘মোনালিসা’৷ ইতালির চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯)-র আঁকা এ ছবিতে আমরা দেখতে পাই সেই রমণী, সেই রহস্যে ভরা মুখশ্রী, মুখে রহস্যময় হাসি৷ সে যত না সুন্দরী, তার চেয়ে আরো আকর্ষণীয় তার মুখের ঐ চাপা হাসিটুকু৷ মোনালিসার অভিব্যক্তি, মুখে রহস্যমাখা হাসি পৃথিবীর অসংখ্য চিত্রামোদিকে অভিভূত করে রেখেছে৷ আজকাল রহস্যময় কিছুকে মোনালিসার হাসির সঙ্গে তুলনা করা হয়৷ মানুষ রহস্য পছন্দ করে তাই হয়ত এই রহস্যময় হাসির জন্যই।

রহস্যময় হাসির কারণে কয়েক শতাব্দী ধরে সারা দুনিয়ায় আলোচনার বিষয় ‘মোনালিসা’৷ বহু শিল্পী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সঙ্গীতশিল্পী এবং লেখককে অনুপ্রেরণা জোগায় এই শিল্পকর্ম৷ মোনালিসার ৫০০ বছরের ইতিহাস এখনও মানুষকে আবিষ্ট করে৷

★★★ ১৬ শতকের শুরুতে লিওনার্দো দা ভিঞ্চি যার ছবি আঁকেন তা নিয়ে নানান ধরনের জল্পনা- কল্পনা ছিল৷ অনেকে বলতেন, নারী ও পুরুষ- উভয়েই ঐ ছবির মডেল হয়েছিলেন৷ তবে আরও ব্যাপকভাবে স্বীকৃত ব্যাখ্যা মতে, মোনালিসা আসলে ফ্লোরেনটাইনের এক রেশম ব্যবসায়ীর স্ত্রী লিসা দেল জিওকোন্ডো৷

★★★ ১৫১৯ সালে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির মৃত্যুর পর ফরাসি রাজাদের ব্যক্তিগত সংগ্রহে ছবিটি রাখা হয়৷ ফরাসি বিপ্লবের পর নেপোলিয়ন বোনাপার্টের শোবার ঘরে জায়গা হয় মোনালিসার৷ ১৮১৫ সালে জনসাধারণের দেখার জন্য এই চিত্রকর্ম রাখা হয় প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়ামে৷

★★★ যমজ মোনালিসার দেখা মেলে মাদ্রিদের মিউজিও ডেল প্রাডোতে৷ ২০১২ সালে জানা যায় যে এই ছবিটি মূল ছবির সময়েই আঁকা হয়েছিল৷ দুটি ছবি একই ইতালীয় ব্যাকগ্রাউন্ড ও ল্যাণ্ডস্কেপে করা৷ দ্বিতীয় ছবিটি সম্ভবত ভিঞ্চির এক ছাত্র ফ্রান্সিসকো মেলজির আঁকা৷

★★★ হারিয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত ‘মোনালিসা’ কিন্তু সেই অর্থে বিখ্যাত কোনো শিল্পকর্ম ছিল না৷ নিজের দেশে ফেরত নিয়ে যাবার আশায় এক ইতালীয় ১৯১১ সালে প্যারিসের ল্যুভর থেকে ছবিটি চুরি করে৷ ঐ ব্যক্তি গ্রেফতার হওয়ার আগে প্রায় দুই বছর ছবিটির কোনো হদিস ছিল না৷ তারপর ছবিটি আবারও ল্যুভরে ফিরে আসে৷

★★★ মোনালিসাকে নিয়ে অনেকে অনেক ধরনের অনুভূতি প্রকাশ করে থাকেন, যার সবই কিন্তু ইতিবাচক নয়৷ ১৯৫৬ সালে এই ছবির ওপর ভাঙচুরের দুটি ঘটনা ঘটে৷ একজন তো ছবিটির ওপর অ্যাসিড ছুঁড়ে মারে৷ ফলে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় চিত্রকর্মটি৷ এরপর এক বলিভিয়ান পর্যটক এর ওপর পাথর ছোঁড়ে৷ তারপর থেকে, মোনালিসাকে বুলেটপ্রুফ কাঁচের ভেতরে সুরক্ষিত রাখা হয়৷

★★★ অনেকের ধারণানুযায়ী এই রহস্যের পেছনে রয়েছে  ‘স্ফুম্যাটো'র প্রভাব। অগণিত বিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদ এই শিল্পকর্মের বিশ্লেষণ করেছেন৷ পেয়েছেন বিস্ময়কর সব তথ্য৷ ২০০৮ সালে, মোনালিসার হেঁয়ালিপূর্ণ হাসির রহস্য ভেদ করা হয়৷ ছবি আঁকার একটি কৌশলের নাম ‘স্ফুম্যাটো’৷ ভিঞ্চি ঝাপসা এক ধরণের এফেক্ট তৈরি করতে রংয়ের পাতলা অনেকগুলো স্তর তৈরি করতেন৷ এর ফলেই ছবিতে সৃষ্টি হতো এক ধরনের রহস্যময়তা৷

★★★ শিল্পের ইতিহাসে ‘মোনালিসা’ কেবল প্রশংসাই লাভ করেনি, বরং অগণিত শিল্পীকে বৈচিত্রপূর্ণ কাজ করতে অনুপ্রাণিত করেছে৷ বিংশ শতাব্দীর এই মিডিয়া আইকনকে সাহিত্য, সঙ্গীত, বিজ্ঞাপন সবকিছুতেই পাওয়া যায়৷ বব ডিলান একবার বলেছিলেন, ‘‘মোনালিসার অবশ্যই হাইওয়ে ব্লুজ আছে৷ ওর হাসি দেখেই তা বলে দেয়া যায়৷’

শুধু মোনালিসার চেহারার অদ্ভুত অভিব্যক্তি নয় এই বিশ্বখ্যাত চিত্রের নারীটির অজানা উৎস এটিকে আরও বেশি রহস্যময় করে তুলেছে যার সত্য ভেদ করা যায়নি কয়েক শ’ বছর ধরে। শিল্পকর্মটি ফ্রান্সের ল্যুভ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। ইতিহাসবিদদের মতে লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ১৫০৩ থেকে ১৫০৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী কোন এক সময়ে একটি পাইন কাঠের টুকরোর ওপর মোনালিসার এই ছবিটি আঁকেন। সর্বাধিক প্রচলিত মতটি হলো, ফোরেন্সের এক সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী তার স্ত্রী লিসা দেল জিওকন্দের প্রতিকৃতি আঁকার জন্য ভিঞ্চিকে দায়িত্ব দেন। আবার কেউ বলেন ভিঞ্চি নিজের স্ত্রীকে অনুকরণ করেই সৃষ্টি করেছিলেন এই অমর সৃষ্টি। এই সৃষ্টির পুরোটাই যেন রহস্যের জালে বন্দী।
লেখকঃ এস এম সজীব