ইতিহাস

রাজা হু হং- ৮০০ বছর পুরোনো এক চৈনিক শাসক।

ইতিহাস শুক্রবার, ৩০ আগস্ট ২০১৯ ০২:১৪:২১

আজ থেকে প্রায় ৮০০ বছরেরও আগের কথা। চীনের ঝেইজাং রাজ্যের কিংউয়ান অঞ্চলে লর্ড হু হং নামের একজন রাজা ছিলেন। তার স্ত্রী নাম ছিল নি উ, তাকে তার গুনাবলির জন্য leady of virtue বলেও ডাকা হতো। হু হংকে বলা হত ‘কাউন্সিলের গ্রান্ডমাস্টার’। তবে হু হং কিংবা নি উ, তারা কেউই আজ বেঁচে নেই। সম্প্রতি তাদের সমাধি আবিষ্কৃত হয়েছে চীনের ঝেইজাং রাজ্য থেকে।

হু হং যে আমলে শাসন করতেন, চীন দুটো শাসনামলে বিভক্ত ছিল। দক্ষিণাত্যের চীনকে বলা হত ‘সং ডাইনাস্টি’। সমাধির ভেতর থেকে কিছু লেখা পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারাই এসব প্রকাশ করেছেন জনসম্মুখে। বিশাল দৈর্ঘ্যের এই লেখায় বলা হয়েছে হু হং-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী। এছাড়াও লেখা আছে, “এই সমাধিতে যিনি শুয়ে আছেন, তা যেন অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে।”

১১৯৫ সালের কথা। হু হং তখন তার শাসনকার্য পরিচালনা করছেন। এমন সময় তার ওপর একটি দায়িত্ব এসে পড়ে। আর তা হচ্ছে, তাও-সুয়েহ নামক একটি বিদ্রোহী দলকে দমন করতে হবে। তৎকালীন রাজা ও তার মন্ত্রীসভার মন্ত্রীদের নানাভাবে সমালোচনা ও হেয় করা হচ্ছিলো। হু হং কঠোর হস্তে অপরাধীদের শাস্তি দেন। এছাড়াও যেসকল উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা সুরাপান করত ও বহুবিবাহ করত, তাদেরকে চিহ্নিত করা ও শাস্তিদান করতেন হু হং।

সমাধির ভেতর কি আছে?
ঝেজিয়াং প্রদেশের কালচারাল রেলিকস এন্ড আর্কিওলজি ইন্সটিটিউটের একজন গবেষক, জিয়ানমিং ঝেং ও তার দল এই সমাধিক্ষেত্রটি আবিষ্কার করেন। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, হু হং-এর কবর থেকে কিছু জিনিস চুরি করা হয়েছে তবে তার স্ত্রীর সমাধি অক্ষত ছিল। তাদের দুজনের সমাধিতে যেসকল লেখা ছিল, তার বেশিরভাগই এসেছে নি উয়ের ফলক থেকে। বেশিরভাগ অংশই ক্ষয়ে গিয়েছিল। তবে নি উয়ের সমাধিতে অত্যধিক পরিমাণে পারদের ব্যবহার দেখা যায়। গবেষকেরা ধারণা করছেন, সংরক্ষণ করবার জন্যই এটি করা হয়ে থাকতে পারে।

সমাধির ভেতরে পোর্সেলিনের জারে আঁকা হাতির নকশা, স্বর্নালংকার, স্বর্ণের চিরুনি, স্ফটিকের পাত্র ইত্যাদি নানা জিনিস পাওয়া গিয়েছে।

হু হং এর উত্থান ও শাষনঃ
১১৪৭ সালের এপ্রিলে হু হং জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিক অবস্থা খুব একটা স্বচ্ছল ছিল না। পিতা উক্ত অঞ্চলের অধিবাসীদের কনফুসিয়াসের দর্শন ও শিক্ষা প্রদান করতেন। হু এর পূর্বপুরুষ লংকুয়ান রাজ্য থেকে কিংউয়ানে আসেন। ১০ম শতাব্দীতে চীনে একটি গৃহযুদ্ধ হয়, যার কারণে হাজারো মানুষ বাস্তুহারা হয়েছিল। এই কারণে তারা নিজেদের ভূমি ত্যাগ করে এই অঞ্চলে এসেছিল।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, হু হং পড়াশোনা করতে পছন্দ করতেন। তবে আর্থিক সঙ্গতি না থাকার কারণে পিতা বই কিনে দিতে পারতেন না। হু হং তাই ফেরিওয়ালার নিকট থেকে বই ধার নিয়ে পড়তেন, পরের দিন ফেরত দিতেন। নিজের মেধা, যোগ্যতা ও পরিশ্রমের কারণে হু হং ধীরে ধীরে উচ্চপদে আসীন হন এবং শাসন করতে শুরু করেন। ১১৯৩ সালে “বেস্ট কাউন্টি ম্যাজিস্ট্রেট” খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি।

হু হং এর পতনঃ

১২০০ সালে ইয়াও গোত্র নামের এক যুদ্ধবাজ গোত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, যেটিকে অত্যন্ত কঠোর হস্তে দমন করতে সমর্থ হয়েছিলেন হু হং। হু হং তার স্ত্রী নি উকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। নি উ তার সচ্চরিত্র ও গুণের কারণে প্রসিদ্ধ ছিলেন। আপন গুণাবলীর কারণে হুকে অনেক সময় বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতেন তিনি।

হু হং ১২০০ খৃষ্টাব্দের দিকে এসে তার শারিরীক শক্তি যেমন ধীরে ধীরে হারাতে শুরু করেন, তেমনি বাইরের রাজ্যের আক্রমণ ঠেকানোও তার পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে। ১২০৩ সালে হু হং মৃত্যুবরণ করেন, তার স্ত্রী ১২০৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। দুজনের সমাধি পাশাপাশি অবস্থিত ছিলো। তাতাদের ঘরে দুটো ছেলে ও তিনটে মেয়ে সন্তান হয়েছিল।

এ দুটি সমাধি আবিষ্কার হয় ২০১৪ সালে। সমাধি দুটো নিয়ে নিয়ে ওয়েন উ জার্নালে ২০১৫ সালে আর্টিকেল প্রকাশ পেলে পররবর্তীতে তা ইংরেজিতেও প্রকাশিত হয়।

 

সূত্রঃ https://www.livescience.com/60979-ancient-tombs-chinese-couple.html
https://www.livescience.com/60978-photos-treasures-from-ancient-china-tombs.html    
লেখকঃ এস এম সজীব