
প্রাচীন মিশরের অজানা রহস্য
প্রাচীন মিশর অঞ্চলে পৃথিবীর এক গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতার উত্থান ঘটেছিল। বিস্ময় জাগানিয়া স্তম্ভ পিরামিডের আঁতুড়ঘর প্রাচীন মিশর এখনো অনুসন্ধিৎসু মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। সে সময়ের মিশরের সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র সবকিছু নিয়েই বিস্তর গবেষণা যেন খেই হারাচ্ছে না। হাজার বছর পরও নতুন নতুন তথ্য সামনে আসছে। চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে যাচ্ছে এই আধুনিক যুগের মানুষদের। কিন্তু প্রাচীন মিশরের কিছু ব্যাপার এখনো রহস্যাবৃত। ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ববিদরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সেসব রহস্য উদঘাটনের। ঘটনার পাঠকদের জন্য আজ থাকছে প্রাচীন মিশরের কিছু অজানা রহস্যের সাতসতেরো।
পান্ট রহস্য
প্রাচীন মিশরীয়দের লেখালেখিতে অনেকবারই উঠে এসেছে পান্ট নামের এক রহস্যময় অঞ্চলের কথা। মিশরীয়দের মতে সে অঞ্চলে অনেক মূল্যবান খনিজ পদার্থের সাথে ভিন্ন প্রজাতির অনেক প্রাণীও রয়েছে। নিজের লেখায় তারা পান্টকে ঈশ্বরের ভূমি বলেও আখ্যায়িত করেছে। মিশরীয়দের আঁকা পান্টের মন্দিরের দৃশ্য দেখে গবেষকরা সেই পান্টকে খুঁজে চলেছেন কিন্তু এখনো এই অঞ্চলের অস্তিত্ব অধরাই রয়ে গেছে।
স্ফিংসের মূর্তি
মিশরের ইতিহাসে স্ফিংস নামটি বারবার দৃশ্যপটের সামনে চলে আসে। ফারাও খাফরে প্রায় ১০০ শ্রমিকের সমন্বয়ে ৩ বছরে চুনাপাথরের এই মূর্তি তৈরি করেন। স্ফিংসের মূল আকর্ষণ এর মুখাবয়ব ছিল মানুষের মত এবং অবশিষ্ট দেহাংশ সিংহের আকৃতির। নির্মাণকালীন সময়ে স্ফিংসকে বলা হত বব। এই অদ্ভুত আকৃতির মূর্তি ঠিক কি কারণে তৈরি করা হয়েছিল তা জানা যায়নি। হয়তো প্রাচীন মিশরীয়দের ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে উদ্ভুত দেবতা তৈরির প্রতীক হিসেবেই স্ফিংসকে বিবেচনা করা যেতে পারে।
রাণী নেফারতিতি কোথায়?
ইতিহাস বিখ্যাত মিশরীয় নারী ক্লিওপেট্রার পরেই প্রাচীন মিশরের গুরুত্বপূর্ণ নারী চরিত্রের একজন হচ্ছেন রাণী নেফারতিতি। খ্রিস্টের জন্মের ১৩৩০ বছর আগে মৃত্যু হওয়া রাণী নেফারতিতির নাম পর্যন্ত জানত না ১৯১২ সালের আগে কেউ। ১৯১২ সালে জার্মানির একটি খননকারী দল একটা নারী মূর্তির সন্ধান পায়। এই মূর্তিই বার করে নিয়ে আসে প্রাচীন মিশরের এই প্রভাবশালী নারীর আদ্যোপান্ত। সমাধি খোঁজা শুরু হয় কিন্তু বিধি বাম! তার মমি পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেকে বলে থাকেন নেফারতিতি পরে পুরুষের ছদ্মবেশ ধারণ করে ফারাও সেজে মিশর শাসন করেন। কোন ষড়যন্ত্র তত্ত্বই নেফারতিতির কবরের সন্ধান দিতে পারেনি। ধারণা করা হয় মিশরীয়রা নেফারতিতির কবর এমনভাবে লুকিয়ে রেখেছে যাতে কোন মানুষ খুঁজে না পায়।
পিরামিড তৈরি করেছিল ইহুদি ক্রীতদাসেরা
জগদ্বিখ্যাত মিশরীয় স্তম্ভ পিরামিডের কথা কে না জানে৷ মরুভূমির বুকে পাথরের এসব পিরামিডই মিশরকে বিখ্যাত করে তুলেছে৷ পিরামিডের ভেতরে ফারাওদের মমি রাখা হত। এই ফারাওরা পিরামিডের স্রষ্টা হলেও ইতিহাস মনে রাখেনি এর নির্মাণ শ্রমিকদের কথা। শত শত ইহুদি দাসদের জোরপূর্বক পিরামিড নির্মাণে বাধ্য করা হত৷ তখনকার সময়ে ইহুদিদের দাস হিসেবে ব্যবহার করা হত। পিরামিডের নির্মাণকাজে ইহুদিদের ব্যবহারের এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রথম প্রদান করেন সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিম।
ফারাও তুতেনখামেন এর মমি রহস্য
মিশরীয় ফারাওদের মধ্যে আলোচিত এই ফারাও কিং তুত বা তুতেনখামেন। খুব অল্প বয়সেই তিনি পরপারে পাড়ি জমান। কিন্তু মৃত্যুর পরও তিনি আবার আলোচনার সৃষ্টি করেন। ১৯২২ সালে প্রথম কোন ফারাও এর অক্ষত মমির আবিষ্কার হয়। আর এটাই ছিল তুতেনখামেনের মমি। পিরামিডে তার মমিতে যেই হাত দিতে গেছে পরবর্তীতে তার উপর নেমে এসেছে বিপদ। যারাই কিং তুতের মমিতে অনাবশ্যক বিচরণ করেছে তারাই পরবর্তীতে কোন না কোন রোগে ভুগে অস্বাভাবিকভাবে মারা গিয়েছে। তাই একটা সময়ে চাউর হয়ে যায় এই মমিতে রয়েছে দৈব অভিশাপ।
বিড়ালকে দেবতাজ্ঞান করত মিশরীয়রা
প্রাচীন মিশরে ছোট্ট প্রাণী বিড়াল হয়ে গিয়েছিল এক মহা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। রাজকীয় মানুষজন থেকে শুরু করে সাধারণ মিশরীয়রা বিড়ালকে বেশ সমীহ করত। মিশরীয়রা বিড়ালকে বলত মাউ। পরিবারে কারো বিড়াল থাকলে তাকে সন্তানের মত আদরযত্ন করা হত। কারো ঘরে বিড়াল না থাকলে সংশ্লিষ্ট ঘরের সদস্যরা দুঃখ পেত। বিড়াল ভিনদেশে রপ্তানি করা নিষিদ্ধ ছিল। কৃষিতে অনিষ্টকারী ইদুর খেয়ে বিড়াল ভূমিকা পালন করত বলে মিশরীয়রা বিড়ালকে আপন করে নেয়। সুখ ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বিড়ালকে পবিত্র বলে গণ্য করা হত। বিড়াল হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডও ছিল।
প্রাচীন মিশর এক রহস্যের আধার। পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রোমাঞ্চকর সব ইতিহাস, ঐতিহ্য। প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি মিশর তাই হাজার বছর পরেও জ্ঞান ও সভ্যতাপিপাসু মানুষদের আগ্রহের শীর্ষবিন্দু হয়ে জাগরূক হয়ে আছে।
লেখকঃ উবায়দুর রহমান রাজু