ইতিহাস

যুগে যুগে ভয়ংকর অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি

ইতিহাস সোমবার, ২৪ জুন ২০১৯ ১০:৪৬:৩১

ভয়ংকর অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের প্রচলন প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি চলে আসছে। সরকার ব্যবস্থা এবং প্রশাসন গড়ে উঠার সাথে সাথে মৃত্যুদণ্ডের ধরণও পাল্টেছে। আধুনিক যুগে ভয়ংকর সব অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি দেশের আদালত নির্ধারণ করলেও মধ্যযুগ কিংবা প্রাচীনকালে যারা নিজেদের কর্তৃপক্ষ মনে করত তারা নিজেদের খেয়ালখুশিমত মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করত। সম্ভব অসম্ভব সব নিষ্ঠুর উপায়ে কার্যকর করা হত। আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও এখনো মৃত্যুদণ্ড প্রথা চালু আছে এবং নানান উপায়ে সেটা কার্যকর করাও হচ্ছে। কিছু দেশ এই প্রথা থেকে সরে আসলেও বিশ্বের অনেক দেশে এখনো মৃত্যুদণ্ডের বিধান চালু আছে। প্রাচীন, মধ্যযুগ এবং আধুনিককালের মৃত্যুদণ্ডের প্রথাই আজকের ফিচার।

শূলে চড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড

শূলে চড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডর কথা মনে হলেই চোখে ভেসে উঠে যীশু খ্রিস্টের কথা। রোমান সাম্রাজ্যে মৃত্যুদণ্ডের এই পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি প্রচলন ছিল। তক্তার সাথে অপরাধীর হাত পা বেঁধে দেয়া হত এবং বাঁধা হাত পায়ের সাথে পেরেকও ঠুকে দেয়া হত। তারপর সেই তক্তাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হত। একসময় অপরাধী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত। আগেকার দিনে রাজদ্রোহীদের এমন শাস্তি দেয়া হত।

গিলোটিনে মৃত্যুদণ্ড

গিলোটিনে মৃত্যুদণ্ড মানব ইতিহাসের এক বর্বর ইতিহাস। এ পদ্ধতিতে অপরাধীর মৃত্যুর জন্য একটি দড়িতে ধারালো বেড সংযোগ করা হয়। তারপর অপরাধীর মাথা বরাবর  দড়ি ছেড়ে দেওয়া হত। আর তারপরই মাথা দেহ থেকে আলাদা হয়ে যেত। অনেক সময় এই পদ্ধতি ব্যর্থ হত। এর ফলে ঐ অপরাধীর দুর্দশা আরো বেড়ে যেত।

শিরশ্ছেদ

মৃত্যুদণ্ডের বহুল আলোচিত একটি প্রথার নাম শিরশ্ছেদ। প্রাচীন ও মধ্যযুগ পেরিয়ে আধুনিক যুগেও এই প্রথার অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়৷ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে প্রায়ই ঘটা করে জুমার নামাজের শেষে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এই পদ্ধতিতে অপরাধীর হাত পা বেঁধে জল্লাদের মাধ্যমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মৃত্যুদণ্ড সম্পন্ন করা হয়।

লিং চি

চীনে এই পাশবিক মৃত্যুদণ্ডের প্রথাটি প্রচলিত ছিল। এই পদ্ধতিতে অপরাধীর দেহের অঙ্গগুলো এক এক করে ছিন্ন করা হত। যতক্ষণ না পর্যন্ত মৃত্যু সম্পন্ন না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত এই অমানবিক কাজ চলত। বলাই বাহুল্য এই পদ্ধতিতে আসামী ভয়ংকর যন্ত্রণা ভোগ করত। বিশ শতকে এসে চীন এই বীভৎস প্রথা থেকে সরে দাঁড়ায়।

পাথর ছুঁড়ে মৃত্যু

কিছুদিন আগে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ ব্রুনেই  শরীয়াহ আইন হিসেবে সমকামীতার শাস্তি হিসেবে পাথর ছুঁড়ে মৃত্যুর আইন পাস করে। যদিও বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়ে এই আইন বাতিল করতে বাধ্য হয় ব্রুনেই সরকার। তাছাড়া প্রাচীন পারস্যে ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে পাথর ছুঁড়ে মারা পদ্ধতির প্রচলন ছিল। নিকট অতীতেও মৃত্যুদণ্ডের এই বিধান প্রচলিত থাকলেও বর্তমানে এই প্রথা আর দেখা যায় না।

বাঁশ দিয়ে মৃত্যুদণ্ড

প্রাচীনকালে এই পদ্ধতির মৃত্যুদণ্ডের প্রচলন ছিল। অপরাধীকে একটি বর্ধনশীল বাঁশের উপর বেঁধে রাখা হত। একসময় ঐ বাঁশ বৃদ্ধি পেতে পেতে পেট চিরে বের হয়ে যেত। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে অপরাধী মারা যেত।

বৈদ্যুতিক চেয়ারে রেখে মৃত্যুদণ্ড

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ডের এই ভয়ংকর পদ্ধতি চালু আছে। এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামীকে একটি বৈদ্যুতিক চেয়ারে হাত পা বেঁধে রাখা হয়। কাচের একটি বদ্ধ ঘরে প্রায় ২ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ ছেড়ে দেয়া হয়। ফলে একটু নড়াচড়ার আগেই প্রচণ্ড শক খেয়ে অপরাধী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড

এখনো পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডকে সবচেয়ে বেশি মানবিক বলে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান সহ বিশ্বের ৫৮ টি দেশে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের এই প্রথা চালু আছে। এই পদ্ধতিতে আসামীর মুখে কালো কাপড় বেঁধে গলায় দড়ি বেঁধে দেয়া হয়। দড়ি ঝুলিয়ে দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য আসামীর পায়ের দুই রগ কেটে দেয়া হয়।


বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে শ্লোগান উচ্চারিত হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি সোচ্চার। অনেক দেশ এই প্রথা থেকেও বেরিয়ে এসে উদারতার পরিচয় দিলেও সাড়া নেই অপরাপর দেশগুলোতে৷ তবে আশা করা যায় মানব ইতিহাসের এই বর্বর প্রথা অদূর বা সুদূর ভবিষ্যতে পৃথিবী থেকে মুছে যাবে।
    

লেখকঃ উবায়দুর রহমান রাজু