
মুক্তিযুদ্ধের খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা পর্ব এক
আমাদের সাতজন বীরশ্রেষ্ঠদের নাম আমরা সকলেই জানি। কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বসূচক অবদানের জন্যে আরো কিছু উপাধী দেয়া হয়েছিল। বীর প্রতীক, বীর উত্তম বা বীর বিক্রমদের নাম আলাদা আলাদাভাবে শুনেছি। পুরো তালিকাটি সচরাচর চোখে পড়েনা। তাই খেতাবপ্রাপ্তদের নামের একটা পূর্ণ তালিকা একসাথে করার জন্যে এটি একটি ছোট প্রয়াস। আমাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যেও কাউকে কাউকে দেখা যায়, যারা ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠর নামও সঠিকভাবে বলতে পারে না। এ লেখাটি কারো জন্যে উপকারী হবে বলে আশা করছি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে কতজন মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন সে বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায় নি।
সেনাবাহিনীর সংরক্ষিত দলিল অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর কয়েকজন সেক্টর কমান্ডার ও সাব-সেক্টর কমান্ডারদের প্রকাশিত বইয়ে নিয়মিত বাহিনীর ২৪ হাজার ৮০০ এবং অনিয়মিত বাহিনীর ১ লাখ ৭ হাজারসহ মোট ১ লাখ ৩১ হাজার ৮০০ জনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গণ্য করা হয়। এরপর ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নতুন করে প্রণীত তালিকায় ১ লাখ ৫৪ হাজার জনের নাম দেখা যায়। এই তালিকাটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদে “লাল বই” নামে সংরক্ষিত আছে।
এরপর ২০০২ সালে মোট ১ লাখ ৯৮ হাজার জন মুক্তিযোদ্ধার নামে গেজেট প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ২০০৯-১৪ শাসনামলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, বিগত সরকার ৭২ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে তালিকায় যুক্ত করেছে। এরপর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দেওয়া এবং প্রকৃতদের যোগ করার মাধ্যমে গত আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০-২০১২ সালে মোট দুই লাখ নয় হাজার জনের নাম তালিকাভুক্ত করে।
এসকল যোদ্ধার মধ্যে গুটিকয় যোদ্ধাই পদক পেয়েছেন। কিন্তু যারা পেয়েছেন শুধু তাঁরাই যে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন, তা নয়।
সকল যোদ্ধার ভূমিকাই বীরত্বের গাঁথা। সবারই আছে বীরত্বের কাহিনী। কাকে বাদ দিয়ে কাকে দেবেন পদক? কীভাবে তুলনা করবেন বীরত্ব? তবুও আপাত বিচারে যাঁদের অবদান যুদ্ধক্ষেত্রে বেশী প্রভাব বিস্তার করেছে, তাঁদেরকে দেওয়া হয়েছে সম্মাননা। বাকীদের আত্মত্যাগ, বীরত্বকে কোনক্রমেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই!
তালিকা দেখার আগে চলুন চারটি খেতাব সম্পর্কে কিছু জেনে নিই।
স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সরকার মহান মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ধরণের পদক প্রদান করেছে। এই পদকসমূহ কয়েক স্তরে বিভক্ত। যেমন- বীরত্বসূচক পদক, প্রধান সেনাপতির প্রশংসাপত্র, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক পদক এবং আহতসূচক ফিতা।
এর মধ্যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা হল বীরত্বসূচক পদক। এই পদকগুলো গুরুত্ব ক্রমানুসারে
বীরশ্রেষ্ঠ,
বীর উত্তম,
বীর বিক্রম এবং
বীর প্রতীক।
মুক্তিযুদ্ধে যারা চরম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন, তাঁদের অবদানের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন যোদ্ধাকে এসকল খেতাবে ভূষিত করা হয়েছিলো। ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ গেজেটের একটি অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই পদকপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয়।
বর্তমানে ৬৭৬ জন বীরত্বসূচক পদক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। এর মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ রয়েছেন ৭ জন, বীর উত্তম ৬৮ জন, বীর বিক্রম ১৭৫ জন ও বীর প্রতীক ৪২৬ জন। এঁদের মধ্যে সেনাবাহিনীর ২৯১ জন, নৌবাহিনীর ২১ জন, বিমানবাহিনীর ২৩ জন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১১ জন, পুলিশ বাহিনীর ৫ জন এবং গণবাহিনীর ২১৮ জন যোদ্ধা রয়েছেন।
তালিকাঃ বীরশ্রেষ্ঠ
এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদক ও সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। শহীদ সাতজন যোদ্ধা এই মরণোত্তর পদক লাভ করেন।
বীরশ্রেষ্ঠদের তালিকা নিচে দেয়া হলঃ
ক্রম নাম সেক্টর পদবী গ্যাজেট নম্বর
০১ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বাংলাদেশ সেনা বাহিনী ক্যাপ্টেন ০১
০২ হামিদুর রহমান বাংলাদেশ সেনা বাহিনী সিপাহী ০২
০৩ মোস্তফা কামাল বাংলাদেশ সেনা বাহিনী সিপাহী ০৩
০৪ মোহাম্মদ রুহুল আমিন বাংলাদেশ নৌ বাহিনী ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার ০৪
০৫ মতিউর রহমান বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ০৫
০৬ মুন্সি আব্দুর রউফ বাংলাদেশ রাইফেলস ল্যান্স নায়েক ০৬
০৭. নূর মোহাম্মদ শেখ বাংলাদেশ রাইফেলস ল্যান্স নায়েক ০৭
তালিকাঃ বীর উত্তম
এটি বীরত্ব প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। ৬৮ জনের মধ্যে মরণোত্তর পদক পান মোট ২১ জন। বাকী ৪৭ জন জীবদ্দশায়ই গ্রহণ করেন এই সম্মাননা।
শহীদ বীরদের নামের পাশে তারকা (*) চিহ্ন উল্লেখ করা হলো।
ক্রম নাম মুক্তিযুদ্ধকালীন সেক্টর পদবী গ্যাজেট নম্বর'
০১ আবদুর রব মেজর জেনারেল ০৮
০২ কাজী মুহাম্মদ সফিউল্লাহ অধিনায়ক, এস. ফোর্স মেজর জেনারেল ০৯
০৩ জিয়াউর রহমান অধিনায়ক, জেড. ফোর্স লে. জেনারেল ১০
০৪ চিত্ত রঞ্জন দত্ত সেক্টর অধিনায়ক-৪ মেজর জেনারেল ১১
০৫ কাজী নূরুজ্জামান সেক্টর অধিনায়ক-৭ লে. কর্ণেল ১২
০৬ মীর শওকত আলী সেক্টর অধিনায়ক-৫ লে. জেনারেল ১৩
০৭ খালেদ মোশাররফ অধিনায়ক, কে. ফোর্স ব্রিগেডিয়ার ১৪
০৮ মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর সেক্টর অধিনায়ক-৮ মেজর জেনারেল ১৫
০৯ মোহাম্মদ আবু তাহের সেক্টর অধিনায়ক-১১ লে. কর্ণেল ১৬
১০ এ. এন. এম. নূরুজ্জামান সেক্টর অধিনায়ক-৩ লে. কর্ণেল ১৭
১১ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম সেক্টর অধিনায়ক-১ মেজর ১৮
১২ আবদুস সালেক চৌধুরী সেক্টর অধিনায়ক-২ মেজর ১৯
১৩ এ জে এম আমিনুল হক অধিনায়ক, ৮ ইস্ট বেঙ্গল ব্রিগেডিয়ার ২০
১৪ খাজা নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া* সেক্টর-৪ লিডার গণবাহিনী ২১
১৫ হারুন আহমেদ চৌধুরী সেক্টর-১ মেজর জেনারেল ২২
১৬ এ.টি.এম. হায়দার সেক্টর অধিনায়ক-২ লে. কর্ণেল ২৩
১৭ মোহাম্মদ আবদুল গাফফার হালদার অধিনায়ক, ৯ ইস্ট বেঙ্গল লে. কর্ণেল ২৪
১৮ মো. শরীফুল হক ডালিম সেক্টর-৪ লে. কর্ণেল ২৫
১৯ মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর সেক্টর-৯ মেজর ২৬
২০ মেহবুবুর রহামান সেক্টর-২ লে. কর্ণেল ২৭
২১ জিয়াউদ্দিন আহমেদ অধিনায়ক, ১ম ইস্ট বেঙ্গল লে. কর্ণেল ২৮
২২ আফতাবুল কাদের* সেক্টর-১ ক্যাপ্টেন ২৯
২৩ মাহবুবুর রহমান* জেড ফোর্স ক্যাপ্টেন ৩০
২৪ সালাহউদ্দিন মমতাজ* ১ম ইস্ট বেঙ্গল ক্যাপ্টেন ৩১
২৫ মোহাম্মদ আজিজুর রহমান ২য় ইস্ট বেঙ্গল মেজর জেনারেল ৩২
২৬ এস এম ইমদাদুল হক* ৮ম ইস্ট বেঙ্গল লেফটেন্যান্ট ৩৩
২৭ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন* ১ম ইস্ট বেঙ্গল লেফটেন্যান্ট ৩৪
২৮ আবু মঈন মোহাম্মদ আশফাকুস সামাদ* সেক্টর-৬ লেফটেন্যান্ট ৩৫
২৯ আফতাব আলী* -- ক্যাপ্টেন ৩৬
৩০ ফয়েজ আহমদ* -- সুবেদার ৩৭
৩১ বেলায়েত হোসেন* -- নায়েব সুবেদার ৩৮
৩২ মঈনুল হোসেন* -- নায়েব সুবাদার ৩৯
৩৩ হাবিবুর রহমান -- নায়েব সুবাদার ৪০
৩৪ শাহে আলম* -- হাবিলদার ৪১
৩৫ মোহাম্মদ নুরুল আমিন -- ক্যাপ্টেন ৪২
৩৬ নাসির উদ্দিন* -- হাবিলদার ৪৩
৩৭ আবদুল মান্নান* -- নায়েক ৪৪
৩৮ আবদুল লতিফ মন্ডল* -- ল্যান্স নায়েক ৪৫
৩৯ আবদুস সাত্তার -- হাবিলদার ৪৬
৪০ নূরুল হক* -- সিপাহী ৪৭
৪১ শামসুজ্জামান* ৮ম ইস্ট বেঙ্গল সিপাহী ৪৮
৪২ সাফিল মিয়া ৯ম ইস্ট বেঙ্গল সিপাহী ৪৯
৪৩ ফজলুর রহমান খন্দকার* -- সুবেদার ৫০
৪৪ মজিবুর রহমান -- নায়েব সুবেদার ৫১
৪৫ শফিকউদ্দিন চৌধুরী* -- নায়েক ৫২
৪৬ আবু তালেব -- সিপাহী ৫৩
৪৭ সালাহউদ্দিন আহমেদ -- ডিএডি ৫৪
৪৮ আনোয়ার হোসেন* -- সিপাহী ৫৫
৪৯ এরশাদ আলী* -- সিপাহী ৫৬
৫০ মোজাহার উল্লাহ এম এফ, সেক্টর-১ নৌ- কমান্ডো ৫৭
৫১ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন নৌ বাহিনী লে. কামান্ডার ৫৮
৫২ আফজাল মিয়া নৌ বাহিনী ই আর এ ৫৯
৫৩ বদিউল আলম নৌ বাহিনী এম ই-১ ৬০
৫৪ সিরাজুল মওলা নৌ বাহিনী এ বি ৬১
৫৫ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী নৌ বাহিনী কমোডোর ৬২
৫৬ মতিউর রহমান এম এফ নৌ কমান্ডো ৬৩
৫৭ মোহাম্মদ শাহ আলম এম এফ, সেক্টর-১ নৌ কমান্ডো ৬৪
৫৮ আবদুল করিম খন্দকার বিমানবাহিনী প্রধান গ্রু. ক্যাপ্টেন ৬৫
৫৯ খাদেমুল বাশার সেক্টর অধিনায়ক-৬ এয়ার ভাইস মার্শাল ৬৬
৬০ সুলতান মাহমুদ অধিনায়ক, কিলো ফ্লাইট এয়ার ভাইস মার্শাল ৬৭
৬১ শামসুল আলম সদর দফতর, মুজিবনগর গ্রুপ ক্যাপ্টেন ৬৮
৬২ বদরুল আলম কিলো ফ্লাইট স্কোয়াড্রেন লীডার ৬৯
৬৩ লিয়াকত আলী খান সদর দপ্তর, জেড. ফোর্স স্কোয়াড্রেন লীডার ৭০
৬৪ সাহাবউদ্দিন আহমেদ কিলো ফ্লাইট ক্যাপ্টেন ৭১
৬৫ আকরাম আহমেদ কিলো ফ্লাইট ক্যাপ্টেন ৭২
৬৬ শরফুদ্দীন আহমেদ কিলো ফ্লাইট ক্যাপ্টেন ৭৩
৬৭ মাসরুর-উল-হক সিদ্দিকী সেক্টর-৮ ক্যাপ্টেন ৭৪
৬৮ আবদুল কাদের সিদ্দিকী সেক্টর-১১ মুক্তিবাহিনী ৭৫