
পলাশী ব্যারাক আন্দোলন- বাংলা ভাষার জন্য রাজপথের প্রথম আন্দোলন।
(ভাষা আন্দোলন বলতে আমরা যে অধ্যায়ের সাথে পরিচিত, তা ১৯৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু এর আগেও এই ভাষার জন্য অনেক ঘটনা ঘটেছে। এ সংক্রান্ত একটি সুন্দর লেখা ইন্টারনেটে পেয়েছি। নিম্নে তা দেয়া হলো।)
বর্তমান সময়ে ভাষা আন্দোলন বলতে শুধুমাত্র ২১ শে ফেব্রুয়ারির ঘটনাকেই মনে করেন অনেকেই। যদিও ভাষা আন্দোলন এক দিনে গড়ে উঠেনি। ১৯৪৭ থেকেই আমাদের মাতৃভাষার জন্য লড়াই করতে হয়েছে। মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথের প্রম লড়াই এবং সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য আন্দোলন ছিল পলাশী ব্যারাক ও সচিবালয়ের ঘটনা। এই ঘটনার উৎস ছিল উর্দু ভাষার পক্ষে প্রচার এবং জনসভার আহবান। ১৯৪৭ সালের ১৩ ই ডিসেম্বর ঢাকার চকবাজার মসজিদের সামনে এক জনসভার আয়োজন করে চকবাজারের উর্দুভাষীগণ। এই জনসভার উদ্দেশ্য ছিল উর্দুকে পূর্ববাংলার রাষ্ট্রভাষা হিসাবে গ্রহন করা। এই জনসভার প্রচারনার জন্য ১২ ডিসেম্বর কতিপয় উর্দুভাষী ' মুকুল' নামের একটি বাসে করে ঢাকা শহরের কিছু জায়গা ঘুরে বেড়ায়। মাইকযোগে তারা জনসভার ঘোষণা তথা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানায়। একই সাথে তারা জনসাধারণের মধ্যে প্রচার পত্র বিলি করে। চকবাজার থেকে শুরু করা এই প্রচার কাজ পলাশী ব্যারাক এর সামনে আসলে বাঙালিদের দ্বারা বাঁধার সম্মুখীন হয়। পলাশী ব্যারাক তখন বাঙালি সরকারি কর্মচারী এবং ছাত্রদের আবাসস্থল হিসাবে ব্যবহৃত হতো। পলাশী ব্যারাকের পাশেই ছিল সলিমুল্লাহ মুসলিম হল। পলাশী ব্যরাকের জনগন প্রচারনাকারিদের উর্দুর পক্ষে প্রচারণা এবং আপত্তিকর বক্তব্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকতে বলেন। উল্লেখ্য প্রচারপত্রের সারমর্ম ছিল
'উর্দু মুসলমানদের ধর্মীয় ভাষা। এই ভাষার বিরুদ্ধে যে কথা বলিবে সে কাফের। এই ধরনের কাফের বা বিধর্মীদের শায়েস্তা করিতে হইবে এবং উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করিতে হইবে।'
ক্রমেই এই উর্দুভাষীদের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে বাক- বিতণ্ডা শুরু হয়। যা পরে সংঘর্ষের রুপ নেয়। এই সংঘর্ষে পলাশী ব্যারাকে বসবাসরত সরকারি কর্মচারী ও সাধারণ জনগন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা জড়িয়ে পরে। এক পর্যায়ে উর্দুভাষী প্রচারনাকারিরা পরাস্ত হয়ে সে স্থান ত্যাগ করে। এই ঘটনার প্রায় আধ ঘণ্টা পরে বহু সংখ্যক উর্দুভাষী কয়েকটি বাসে করে লাঠি- সোটা নিয়ে পুনরায় পলাশী ব্যারাকে ফিরে আসে। তারা পলাশী ব্যারাক এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এর ছাত্রাবাসে আক্রমণ চালিয়ে ব্যপক ক্ষতি সাধন করে। তাদের আক্রমনে বেশ কিছু সংখ্যক ছাত্র এবং জনতা আহত হন।
এই ঘটনার পর ছাত্র এবং সরকারি কর্মচারীরা পলাশী ব্যারাক এর অভ্যন্তরে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। সভা শেষে তারা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের অভিমুখে অগ্রসর হন। পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী মিছিলকারীরা তৎকালীন মন্ত্রী আবদুল হামিদ এর বাসভবনে পৌঁছে এবং তাকে নিশ্চয়তা প্রদানে বাধ্য করে যে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা না হলে তিনি পদত্যাগ করবেন।
সঠিক প্রচারণার অভাবে ভাষা আন্দোলনের এই বীরত্বগাঁথা আজ ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
তথ্য সূত্রঃ
ভাষা আন্দোলনের দলিল পত্র
রতন লাল চক্রবর্তী
ইতিহাস বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
(ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)