
রাহুল দ্রাবিড় : ক্রিকেটে 'দ্য ওয়াল' হয়ে উঠার গল্প
ক্রিকেটপ্রেমীরা তাদের দেখা যেসকল বিখ্যাত ক্রিকেটারের খেলা দেখেছে তাদের মধ্যে রাহুল শারদ দ্রাবিড় হলেন অন্যতম । ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে এমন নিখুঁত ব্যাটসম্যান ভারত ক্রিকেট টিম খুব কমই পেয়েছে। অসাধারণ ব্যাটিংনৈপূন্যের মাধ্যমে ভক্তদের নিকট থেকে আদায় করে নেন দ্য ওয়াল,জ্যামি, মিস্টার ডিপেন্ডেবলসহ ইত্যাদি নাম।
তিনি ১৯৭৩ সালের ১১ই জানুয়ারি ভারতের ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন। পরে তিনি পরিবারের সাথে বেঙ্গালুরোতে চলে যান। দ্রাবিড় একাডেমিক পড়াশোনায় খুব ভালো ও মনোযোগী ছিলেন। এই কিংবদন্তির জানা অজানা অনেক বিষয় নিয়ে আমাদের আজকের এই আয়োজন সাজানো হয়েছে।
ক্রিকেটে হাতেখড়ি : ক্রিকেট পাগল ফ্যামিলিতে মূলত রাহুলের বেড়ে উঠা। তার বাবা ও ভাই ক্রিকেট খেলাকে অনেক ভালোবাসতেন। রাহুল নিজেও ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। মূলত সেখান থেকেই রাহুল ক্রিকেটকে ভালোবাসতে শুরু করেন। যখন তার বয়স মাত্র ১২ তখন থেকে তিনি ক্রিকেটের সাথে যুক্ত হন।
তিনি কর্ণাটক প্রদেশের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৫, অনূর্ধ্ব ১৭ ও অনূর্ধ্ব ১৯ দলে খেলেছেন। ১৯৯১ -১৯৯২ মৌসুমে কর্ণাটক প্রদেশের হয়ে খেলার মাধ্যমে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক হয় তার। উক্ত মৌসুমে তার অসাধারণ ব্যাটিংয়ে দুইটি শতকসহ ৬৩.৩ ব্যাটিং গড়ে ৩৮০ রান করেন দ্রাবিড়। নিজের প্রথম মৌসুমে রঞ্জি ট্রফিতে ভাল খেলার বদৌলতে ডুলিপ ট্রফিতে সাউথ জোনের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হন তিনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ও উত্থান : একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে রাহুল দ্রাবিড়ের অভিষেক হয় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে । ওয়ানডে অভিষেকের দুই মাস পর লর্ডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় তার। দ্য ওয়ালখ্যাত এই ক্রিকেটার তার টেস্ট অভিষেকের দিনে ৯৫ রানের একটি ঝলমলে ইনিংস খেলেন।
ওয়ানডেতে ধীর গতির ব্যাটসম্যান ছিলেন বলে দর্শক, টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে ধরে সবার নিকট থেকেই তিনি নানা কটুক্তি শুনেছেন । যার ফলে ওয়ানডে একাদশে জায়গা করে নিতে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি।
একসময় দ্রুতগতিতে ব্যাট চালিয়ে তার সমালোচকদের মন জয় করে নিয়ে জায়গা করে নেন ভারতীয় ওয়ানডে দলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের ৩ বছর পর ১৯৯৯ সালের আইসিসি বিশ্বকাপে সেরা ফর্মে ছিলেন তিনি।
সে বিশ্বকাপে ব্যাটে বলের অপূর্ব রসায়ন ঘটিয়ে টুর্নামেন্ট সেরা সর্বোচ্চ ৪৬১ রান করেন ভারতীয় সাবেক এই ব্যাটসম্যান। উইকেট কিপার হিসেবে ওয়ানডে ম্যাচে ৭১টি ক্যাচ ও ১৩টি স্ট্যাম্পিংসহ মোট ৮৪টি ডিসমিসাল করেছেন তিনি। টেস্টে নন উইকেট কিপার হিসেবে ২১০টি ক্যাচ নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড করেন ইন্দোরে জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটার।
টেস্টে ভারতকে ২৫টি ম্যাচে নেতৃত্ব দেন রাহুল। আট ম্যাচে জয়লাভ করেন, ৬ ম্যাচে প্রতিপক্ষের কাছে হেরে যান এবং বাকী ম্যাচগুলি ড্র হয়। টেস্টে তার নেতৃত্বে দল শতকরা ৩২ভাগ জয়লাভ করে। যার মাধ্যমে প্রমাণ মেলে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে তিনি ততটা পাকাপোক্ত ছিলেন না। তিনি ৭৯টি ওডিআই ম্যাচেও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
ফলাফল হিসেবে ৪২টি ম্যাচে ভারত জয়লাভ করে। উক্ত পরিসংখ্যান বলে দেয় ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে তিনি যথেষ্ট দক্ষ ও যোগ্য ছিলেন।
২০০৭ সালের আইসিসি বিশ্বকাপে রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বে ভারতীয় ক্রিকেট দল পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় যেটি রাহুলের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অত্যন্ত বাজে সময় হিসেবে বলা হয়।
রাহুল দ্রাবিড় তার পুরো ওডিআই ক্যারিয়ারে ৩৪৪টি ম্যাচ খেলে ৩৯.১৭ গড়ে ১২টি শতক ও ৮৩টি অর্ধশতকের কল্যাণে ১০৮৮৯ রান করেন। ওয়ানডেতে ভারতীয়দের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড আছে তার। টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৬৪টি ম্যাচ খেলে ৫২.৩১ ব্যাটিং গড়ে ৩৬টি সেঞ্চুরি ও ৬৩টি হাফসেঞ্চুরির মাধ্যমে ১৩২৮৮ রান করেন তিনি। টেস্টে ভারতীয়দের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তার।
ক্লাব ক্যারিয়ার : ভিজায় মল্লায়া'র মালিকানাধীন আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজি রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরোর ( আরসিবি) আইকন খেলোয়াড় ছিলেন দ্রাবিড়। ২০০৮ সালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ারলীগ আইপিএলে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরো দলের সেরা রান স্কোরার ছিলেন তিনি। এরপর তিনি আইপিএলের অন্য একটি ফ্রাঞ্চাইজি রাজস্থান রয়েলসের হয়েও খেলেন। রাহুল আইপিএলে বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে মোট ৮৯টি ম্যাচ খেলে ১১টি হাফসেঞ্চুরির কল্যাণে ১১৫.৫২ স্ট্রাইকরেটে ২৮.২৩ গড়ে ২১৭৪ রান করতে সক্ষম হন।
অবসর : ২০১১ সালে ক্রিকেটের সীমিত ওভারের খেলা থেকে অবসর নেন তিনি। এছাড়াও ২০১২ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার মধ্যদিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি ঘটান মি.ডিপেন্ডেবলখ্যাত এই ব্যাটসম্যান।
অবসর পরবর্তীকালীন সময় : রাহুল দ্রাবিড়ের অবসরের পর ভারত 'এ' ক্রিকেট দল ও অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট দলের কোচ হিসেবে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার দেখানো পথে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দল ২০১৬ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে রানার্স আপ হয়। রিশাব পন্ট, শ্রেয়াস আয়ার ও সঞ্জু স্যামসন তারই আবিষ্কার। এছাড়াও তিনি ২০১৭ সালের আইপিএলে দিল্লি ডেয়ার ডেভিলসের মেন্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তথ্যসূত্র : www.sportskeeda.com
লেখকঃ আরিফুল ইসলাম সোহান