খেলাধুলা

শেন ওয়ার্ন : সর্বকালের সেরা লেগস্পিন বোলারের ইতিবৃত্ত

খেলাধুলা শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:৫৯:৫৭

ক্রিকেটের ইতিহাসে অনেক স্পিনার আছেন যারা অসাধারণ বোলিংনৈপূন্যে দিয়ে জয় করে নিয়েছেন ভক্তদের হৃদয়। অস্ট্রেলিয়ান সাবেক লেগস্পিন বোলার শেন ওয়ার্ন ক্রিকেটের ইতিহাসে ঠিক তেমনি একজন। তাকে সর্বকালের সেরা লেগস্পিন বোলার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

তিনি ১৯৬৯ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে জন্মগ্রহণ করেন। ওয়ার্ন ছিলেন একজন ডানহাতি লেগব্রেক বোলার। হারিয়ে যেতে বসা নিষ্প্রাণ লেগব্রেক বোলিংয়ে  প্রাণের সঞ্চারণ ঘটানোর পাশাপাশি ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এটিকে যুক্ত করেন তিনি।

ওয়ার্ন দুইবার উইজডেন ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার হিসেবে নির্বাচিত হন। এছাড়াও উইজডেন ক্রিকেটার অব দ্য ওয়ার্ল্ড হিসেবে দুইবার নির্বাচিত হন তিনি।
ক্রিকেটে হাতেখড়ি : ছোটবেলা থেকেই তিনি খেলাধুলায় অনেক মেধাবী ছিলেন।

 যার প্রমাণ মিলে যখন তিনি মিন্টোন গ্রামার স্কুলে স্পোর্টস স্কলারশীপ নিয়ে পড়তে যান। খেলাধুলায় অনেক মেধাবী থাকার কারণেই তাকে এই স্কলারশিপের জন্য নির্বাচিত করা হয়। তিনি সর্বপ্রথম মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে ভিক্টোরিয়া ক্রিকেট এসোসিয়েশন অনূর্ধ্ব ১৬ ডওলিং শিল্ড প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধিত্ব করেন। এছাড়াও শেন ওয়ার্ন পেশাগত ক্রিকেটার হওয়ার আগে সেন্ট ক্লিডার্স ক্লাবের অনূর্ধ্ব ১৯ দলে ফুটবল খেলেছেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক :  ১৯৯০ সালের ২রা জানুয়ারি সিডনিতে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ খেলার মাধ্যমে  আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে  অভিষেক ঘটে তার। অজি সাবেক এই লেগি বোলারের অভিষেকটা খুবই সাদামাটা হয়েছে।

 ঐ ম্যাচে তিনি মাত্র ১টি উইকেট তুলে নিতে সক্ষম হলেও তার দল ভারতের নিকট ১৫০ রানের বড় ব্যাবধানে হেরে যায়। একই পারফরমেন্স পরের ম্যাচেগুলিতে অব্যাহত থাকার কারণে তাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়।
 টার্নিং পিচে অজি বোলাররা উইকেট তুলতে অপারগ হলে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলে শেন ওয়ার্নকে আবারও ডাকা হয়।

এই সময় ওয়ার্ন সুযোগটি কাজে লাগাতে ভুল করেন নি। ফলাফল হিসেবে ৫২ রান দিয়ে প্রতিপক্ষের ৭টি উইকেট তুলে নিয়ে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৯৯৩ সালের ২৪ মার্চ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হয় তার।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উত্থান ও পতন : ১৯৯৪ সালের ২রা জানুয়ারি নিজের দ্বিতীয় টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১২টি উইকেট তুলে নেন তিনি। যদিও উক্ত ম্যাচে প্রতিপক্ষের কাছে পাঁচ রানে হেরে যায় অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯৪ সালে ব্রিজবেনে সফরকারী  ইংল্যান্ডকে ৫০৮ রানের টার্গেট দেয় অস্ট্রেলিয়া।

কিন্তু শেন ওয়ার্নের বিধ্বংসী সুইংয়ের সামনে দাঁড়াতে পারেনি কোন ইংলিশ ব্যাটসম্যান। ফলাফল হিসেবে মাত্র ১৮৪ রানেই গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। ১৯৯৬ সালের উইলস বিশ্বকাপে  ওয়ার্ন সর্বমোট ১২টি উইকেট তুলে নেন।

 উক্ত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। কিন্তু ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে গিয়ে রানার্সআপ হয় অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালের মধ্যবর্তী সময়ে অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে দলে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন শেন ওয়ার্ন।

এই সময়ে ১০ ম্যাচের মধ্যে ১টিতে হেরে ৯টি ম্যাচ জিতেছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই অধিনায়ক  তার ক্যারিয়ার চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন বিতর্কিত ইস্যুর মুখে পড়েছিলেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০০৩ সালের আইসিসি বিশ্বকাপের আগে ড্রাগ টেস্ট পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন নি। ফলে ১ বছরের জন্য সকল ধরনের ক্রিকেট থেকে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়।

ক্লাব ক্যারিয়ার : ভিক্টোরিয়া, হ্যাম্পাশায়ার, রাজস্থান রয়্যালস ও মেলবোর্ন স্টার্সসহ বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে খেলেছেন শেন ওয়ার্ন । ২০০৮ সালে আইপিএলের অন্যতম ফ্রাঞ্চাইজি রাজস্থান রয়্যালসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। উক্ত মৌসুমে রাজস্থান রয়্যালসের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

রেকর্ডসমূহ : ১৯৯৩ সালে একটি  চমৎকার বোলিং ডেলিভারির মাধ্যমে  মাইক গ্যাটিংকে প্রচন্ডভাবে বোকা বানিয়ে উইকেট করেন ওয়ার্ন । পরে সেটি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম বিচক্ষণ বোলিং ডেলিভারি হিসেবে রেকর্ডবুকে স্থান পায়। ২০০৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত টেস্টে ৭০৮টি উইকেট তুলে নিয়ে সর্বাধিক উইকেট শিকারী বোলারের তালিকায় শীর্ষস্থানে ছিলেন তিনি।

 পরে অবশ্য সর্বকালের সেরা অফস্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন টেস্টে শীর্ষস্থান দখল করেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ১০০০ উইকেট পাওয়ার মাইলফলক স্পর্শ করেন শেন ওয়ার্ন। এছাড়াও কোন সেঞ্চুরি ছাড়া ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩১৫৪ রান করে একটি বিরল রেকর্ড গড়েন তিনি।

অবসর :  ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে  বিদায় নেন মেলবোর্নে জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটার। তিনি ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। ২০০৯ সালে স্কাই স্পোর্টসের সাথে  ধারাভাষ্যকার হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আগে নাইন ক্রিকেট কমেন্টি দলে ধারাভাষ্যকার হিসেবে ছিলেন তিনি।

 তথ্যসূত্র : www.sportskeeda. com
লেখকঃ আরিফুল ইসলাম সোহান