খেলাধুলা

এবিডি ভিলিয়ার্স : এক দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটারের 'মি: ৩৬০ ডিগ্রি' হয়ে ওঠার গল্প

খেলাধুলা শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:১২:৫৪

১৯৮৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম গ্রহণ করেন ক্রিকেট বিশ্বের জনপ্রিয় এই ক্রিকেটার। ক্রিকেট বিশ্বে এবিডি ভিলিয়ার্স নামে পরিচিত এই ক্রিকেটারের পুরো নাম আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্স।

দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলে ডানহাতি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন তিনি। তার অসাধারণ ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে জয় করে নিয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীদের মন। এই তারকা ক্রিকেটারের জানা-অজানা অনেক বিষয় নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা সাজানো হয়েছে।  

ক্রিকেটে হাতেখড়ি :  লেখাপড়া জীবনে ডি ভিলিয়ার্স তার মাধ্যমিক স্তর শেষ করেন প্রিটোরিয়ার বিখ্যাত 'আফ্রিকানিজ হোয়ের সিউনস্কুল' এ যেখানে একই ক্লাসে লেখাপড়া করেন দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অন্যতম ক্রিকেটার ফাফ ডু প্লেসিস।

 ডি ভিলিয়ার্সের বাবা ছিলেন একজন রাগবী খেলোয়াড়।
ক্রিকেট পরিবারে জন্ম নেওয়া ডি ভিলিয়ার্স খেলাধুলায় আগ্রহী ছিলেন। সবধরনের সহযোগিতা তার বাবার নিকট থেকে তিনি পেয়েছেন। মূলত সেখান থেকেই তিনি ক্রিকেটে মনোনিবেশ করেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক :  মাত্র ২০ বছর বয়সে ২০০৪ সালের ১৭ই ডিসেম্বর পোর্ট এলিজাবেথে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হয় তার। উক্ত ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ওপেনিং ব্যাটিংয়ে নেমে ২৮ রান করেন তিনি। ২০০৫ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও অভিষেক হয় তার। উক্ত ম্যাচে ইংল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করতে নেমে  ৫ উইকেট হারিয়ে ২৭০ রান করতে সক্ষম হয়।

জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল ৫০ ওভার ব্যাটিং করে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৭০ রান তুলতে সমর্থ হয়। এই ম্যাচের ফলাফল 'ড্র' হয়। উক্ত ম্যাচে এবিডি ভিলিয়ার্স ৫৬ বলে ২০ রান করেন। ২০০৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টুয়েন্টিতে অভিষেক হয় তার। সেই ম্যাচে এবিডি ভিলিয়ার্স ৩ বল খেলে শূন্য রানে অপরাজিত থাকেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উত্থান-পতন : দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ভারতের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। ক্রিকেটে তার ঝুলিতে আছে অসংখ্য রেকর্ড। ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৬ বলে অর্ধশতক ও ৩১ বলে শতক হাঁকিয়ে এখন পর্যন্ত দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক তিনি। এছাড়াও ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬৪ বলে ১৫০ রান করে দ্রুততম ১৫০ রানের রেকর্ড গড়েন তিনি। ইন্ডিয়ান

প্রিমিয়ারলিগে  ভিরাট কোহলির সাথে ৯২ বলে ২২৯ রানের এক অনবদ্য জুটি বেঁধে টি-টুয়েন্টির ইতিহাসে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড গড়েন তিনি।
তিনি কোনদিন বাজে ফর্মের কারণে দল থেকে বাদ পড়েন নি। কিন্তু ইঞ্জুরির কারণে খেলা থেকে অনেকবার ছিটকে গিয়েছিলেন ।  শুধু ইঞ্জুরির কারণে ২০১৭ সালে বেশকিছু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ থেকে বাদ পড়েন তিনি।

এছাড়াও আইসিসি টুর্নামেন্টে কয়েকবার সেমিফাইনালে হেরে যাওয়ার পর 'চুকার্স' হিসেবে ক্রিকেটবিশ্বে স্বীকৃতি পায় দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল।এবিডি'র নেতৃত্বে  ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে হেরে বিশ্বকাপের শিরোপা থেকে বঞ্চিত হয় প্রোটিয়ারা।

ক্লাব ক্যারিয়ার : এবিডি ভিলিয়ার্স ২০০৩ সাল থেকে প্রথম শ্রেনীর ম্যাচ খেলে আসছেন। টাইটান্স মাল্টিপ্লাইয়ের হয়ে সানফয়েল সিরিজ, মোমেন্টাম ওয়ানডে কাপ ও র্যাম স্লাম টি টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জসহ আরও অনেক লিগে তিনি খেলেছেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ারলিগে

(আইপিএল)নিজের প্রথম তিন মৌসুম দিল্লি ডেয়ার ডেভিলসের হয়ে খেলেছেন। পরে তিনি আইপিএলের অন্য ফ্রাঞ্চাইজি রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরোতে চলে যান। এখন পর্যন্ত আইপিএলের এই ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে মাঠ মাতাচ্ছেন ক্লিন হিটার এই ব্যাটসম্যান।

আইপিএলে ১২৯টি ম্যাচ খেলে ৩৮.১৬ ব্যাটিং গড়ে ১৪৭.১৭ স্ট্রাইকরেটে ৩৪৭৩ রান করেন তিনি। উক্ত রানের মধ্যে ২২টি হাফসেঞ্চুরি ও ৩টি সেঞ্চুরি অন্তর্ভুক্ত আছে । ২০১৫ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ অপরাজিত ১৩৩ রান করেন তিনি। এছাড়াও ২০১৬ সালে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ( সিপিএল) বার্বাডোজ ট্রাইডেন্টসের হয়ে খেলেন এবিডি ভিলিয়ার্স।

অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন : ২০১২ সালের ১১ই জানুয়ারি পার্লে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে  নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে প্রোটিয়াদের নতুন অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হয় তার। উক্ত ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৫০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে প্রোটিয়ারা ৩০১ রান সংগ্রহ করে। জবাবে  দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ২১ ওভারের মাথায় মাত্র ৪৩ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা।

১০৩টি ওয়ানডে ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করে ৫৯টি ম্যাচে জয় লাভ করে এবিডি'র দল। তার নেতৃত্বে ২০১৫ সালের আইসিসি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা সেমিফাইনালে যেতে সক্ষম হয়। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে হেরে যায় সাউথ আফ্রিকা। টেস্টে ৩ ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করে ১ ম্যাচে হেরে ২ ম্যাচে জয়ী হয় এবিডি'র আফ্রিকা।
ক্রিকেটের স্বল্পদৈর্ঘ্য সংস্করন টি-টুয়েন্টিতে ১৬টি ম্যাচে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ৮টি ম্যাচে জয়লাভ করে তার দল।

রেকর্ডসমূহ : ১১৩ টেস্ট ম্যাচে ৫০.৮২ ব্যাটিং গড়ে ৮৬৯০ রান করেন তিনি। এতে ৪৫টি হাফসেঞ্চুরি, ২২টি সেঞ্চুরি ও ২টি ডাবল সেঞ্চুরি অন্তর্ভুক্ত ছিল। আবুধাবিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৭৮ রানের ইনিংসটি ছিল এবিডি'র টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রান। ২২৮টি ওয়ানডে ম্যাচে ৫৩.৫ ব্যাটিং গড়ে ৫৩টি শতক ও ২৫টি অর্ধশতকের কল্যাণে ৯৫৭৭ রান করেন দক্ষিণ আফ্রিকান সাবেক এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।

বোল্যান্ড পার্কে বাংলাদেশের বিপক্ষে এবিডি ভিলিয়ার্সের ওয়ানডেতে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস হচ্ছে ১৭৬ রান। টি-টুয়েন্টি ক্যারিয়ারে ১৩৫.৩৭ স্ট্রাইকরেটে ২৬.১২ ব্যাটিং গড় নিয়ে ১০টি হাফসেঞ্চুরির সুবাদে ১৬৭২ রান করেন তিনি। এই ফর্মেটে তার ক্যারিয়ার সেরা ৭৯ রান আসে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে।

অবসর : ২০১৮ সালের এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল যখন দক্ষিন আফ্রিকা সফর শেষ করে যায় ঠিক এর পরেই এবিডি ভিলিয়ার্স ভক্তদের হতাশ করে সকল ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষনা দেন। এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত! অথচ ক্রিকেটকে তিনি আরো অনেক কিছু দিতে পারতেন।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের আইসিসি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের শোচনীয় অবস্থা দেখে অবসর ভেঙ্গে ওয়ানডে ক্রিকেটে আবারও ফিরতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড তার আবেদন নাকচ করে দেয় । যার ফলে অবসর ভেঙ্গে ওয়ানডে ক্রিকেটে ফেরা হয় নি তার।

তথ্যসূত্র : www.sportskeeda. com
লেখকঃ আরিফুল ইসলাম সোহান