খেলাধুলা

সনাথ জয়সুরিয়াঃ বিশ্বকাপজয়ী এক লঙ্কান অলরাউন্ডারের গল্প

খেলাধুলা সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০৫:০২

১৯৬৯ সালের ৩০শে জুলাই শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাঞ্চলের মটারা জেলায়  জন্মগ্রহণ করেন শ্রীলঙ্কার সাবেক বাঁহাতি ব্যাটিং অলরাউন্ডার সনাথ জয়সুরিয়া। তার বাবা'র নাম ডানস্টান জয়সুরিয়া ও মা'র নাম ব্রিডা জয়সুরিয়া।  পিতামাতার দুই সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন কনিষ্ঠতম।

সনাথ জয়সুরিয়া  তার আক্রমনাত্মক ব্যাটিংশৈলী ও ওয়ানডেতে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে একই সাথে ১২০০০ রান ও ৩০০ এর অধিক উইকেটের জন্য ক্রিকেটপ্রমীদের নিকট স্মরনীয় হয়ে আছেন।  প্রিয় পাঠক সাবেক এই অলরাউন্ডারকে নিয়ে আমাদের আজকের এই আয়োজন সাজানো হয়েছে। চলুন জেনে আসা যাক এই ক্রিকেটারের জানা অজানা অনেক বিষয়।

ক্রিকেটে হাতেখড়ি :  সেন্ট সার্ভেটিয়াস কলেজে থাকাকালীন সময়ে কলেজ ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।  তিনি অসাধারণ অলরাউন্ডিং নৈপুণ্যের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার স্কুল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশীপে 'অবজারভার স্কুলবয় ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার' এওয়ার্ডে নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি সেরা ব্যাটসম্যান ও সেরা অলরাউন্ডার  হিসেবেও নির্বাচিত হন।

পরে  ১৯৮৮ সালে আইসিসি'র যুব বিশ্বকাপে ( বর্তমান আইসিসি অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ)  শ্রীলঙ্কা দলে ডাক পান জয়সুরিয়া।
 অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ভালো খেলার পুরস্কার  হিসেবে শ্রীলঙ্কা 'বি' দলে জায়গা পান তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পূর্বে  শ্রীলঙ্কা 'বি' দলের হয়ে  পাকিস্তানের বিপক্ষে দু'টি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান লঙ্কান এই সাবেক ক্রিকেটার।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক : ১৯৮৯ সালে মেলবোর্নে বক্সিং ডে ওয়ানডেতে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেক হয় তার। সনাথ জয়সুরিয়ার টেস্ট অভিষেক ঘটে ১৯৯১ সালে হেমিল্টনে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।

২০০৬ সালের ১৫ই জুন সাউদাম্পটনে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি  ফর্মেটে অভিষেক হয় তার। সীমিত ওভারের খেলায়  শ্রীলঙ্কার অপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে তার চমৎকার ব্যাটিংশৈলীতে ক্রিকেটে  বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন এই ক্রিকেটার। গ্লেন ম্যাকগ্রা, শেন ওয়ার্ন, ওয়াসিম আকরামদের দাপুটে বোলিংয়ের বিপক্ষে বীরদর্পে ব্যাট চালিয়েছেন শ্রীলঙ্কান সাবেক এই অধিনায়ক।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উত্থান পতন :  ১৯৯৬ সালের আইসিসি বিশ্বকাপে সনাথ জয়সুরিয়ার অসাধারণ অলরাউন্ডিং পারফরমেন্সে প্রথম বিশ্বকাপের জয়ের স্বাদ পায় শ্রীলঙ্কা। উক্ত টুর্নামেন্টে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯৭ সালে ভারতের বিপক্ষে  অসাধারণ ব্যাটিংনৈপূন্যে এক টেস্টে ৩৪০ রান করেন জয়সুরিয়া। টেস্টে শ্রীলঙ্কার যেকোন ক্রিকেটারের চেয়ে দীর্ঘদিন পর্যন্ত এটি ছিল সর্বোচ্চ স্কোর।

শ্রীলঙ্কার সাবেক এই অধিপতি ৩৮টি টেস্ট ম্যাচে শ্রীলঙ্কা দলকে নেতৃত্ব দেন পাশাপাশি ১১৭টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। অধিনায়ক থাকাকালীন সময়ে তার নেতৃত্বে  শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল ২০০৩ সালের আইসিসি বিশ্বকাপে  সেমিফাইনালে উঠতে সক্ষম হয়। কিন্তু উক্ত সেমিফাইনালে হেরে যাওয়ার পর অধিনায়কের দায়িত্ব হারান আধুনিক ক্রিকেটের এই স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান।

ক্লাব ক্যারিয়ার : ২০০৭ সালের আইসিসি বিশ্বকাপে  তার অসাধারণ ক্রিকেট দক্ষতায় ক্রিকেটপ্রেমীদের  মুগ্ধ করেন সনাথ জয়সুরিয়া। যার ফলে এর পরের বছর অর্থাৎ ২০০৮ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএলে  খেলার সুযোগ পান তিনি। উক্ত টুর্নামেন্টে ৫১৪ রান করে  তৃতীয় সর্বোচচ রান স্কোরার হিসেবে শেষ করেন এই টুর্নামেন্ট।

রেকর্ডসমূহ :  দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ৫৭১ রান করে সর্বোচ্চ সংখ্যক রানের  রেকর্ড আছে জয়সুরিয়ার দখলে।  একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে সর্বোচচ ১৮৯ রান করেন যা অন্যকোন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারের দখলে নেই। সনাথ জয়সুরিয়া রোশান মহানামার সাথে টেস্টে ৫৭৬ রানের জুটি বাঁধেন যেটি এখনও পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ পার্টনারশিপ। ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ২৭০টি ছক্কা হাঁকিয়ে এক অনন্য রেকর্ড গড়েন তিনি । এছাড়াও ওয়ানডে ক্রিকেটে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৩৪৩০ রান করেন এই ক্রিকেটার।

অবসর :  ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানান জয়সুরিয়া। টেস্টকে বিদায় জানালেও ক্রিকেটের সীমিত সংস্করণ খেলেছেন আরও চারবছর। অর্থাৎ ২০১১ সালে ক্রিকেটের সীমিত সংস্করণ থেকেও ইতি টানেন সাবেক বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।

ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ব্যাক্তি হিসেবে ২০১০ সালে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলে থাকাকালীন সময়ে তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন ও সংসদ সদস্য হিসেবেও নির্বাচিত হন । পরে ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের সিলেকশন কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি।

তথ্যসূত্র : www.sportskeeda.com
ছবি : www.sportskeeda.com
লেখকঃ আরিফুল ইসলাম সোহান