
একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরিহীন ছিলেন যেসব ব্যাটসম্যান
একদিনের ক্রিকেট কিংবা ওয়ানডে ক্রিকেট যাই বলি না কেন আমরা, বর্তমান সময়ে ক্রিকেটের এই ফর্মেটটি ক্রিকেটপ্রেমীদের নিকট খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একটি দল সর্বোচ্চ ৫০ ওভার ব্যাটিং করার সুযোগ পায়। এই ফর্মেটে একজন ব্যাটসম্যানকে বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে হয় যা টেস্ট থেকে পুরোপুরি ভিন্ন।
টেস্টে একজন ব্যাটসম্যান যেভাবে খেলতে পারেন ওয়ানডেতে ঠিক সেভাবে খেলতে পারেন না। অনেক বিখ্যাত ব্যাটসম্যানরা টেস্টে আলো ছড়ালেও ওয়ানডেতে ছিলেন ম্লান। টেস্টে একাধিক সেঞ্চুরি পেলেও ওয়ানডেতে ছিলেন সেঞ্চুরি বঞ্চিত।
আজ আপনাদের সাথে পরিচিত করাবো এমন কয়েকজন ক্রিকেটারদের সাথে যারা তাদের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ব্যাটিং লাইনআপের টপঅর্ডার কিংবা মিডলঅর্ডারে ৭৫টি'র বেশি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যাট করে একটি শতকেরও দেখা পান নি।
১. মিসবাহ্-উল-হক (পাকিস্তান)
পাকিস্তানের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে যে কয়জন সেরা অধিপতি ছিলেন তাদের মধ্যে মিসবাহ উল হক অন্যতম। পাকিস্তান টেস্ট ক্রিকেটের দুর্দিনে তার উপর অর্পিত করা হয়েছিল অধিনায়কের দায়িত্ব। এমন দুর্দিনে তার ব্যক্তিগত ব্যাটিং দক্ষতা ও দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে দলের হাল ধরেন 'মিঃ ফিফটি' খ্যাত এই ক্রিকেটার। পাকিস্তানের জার্সি জড়িয়ে টেস্টের পাশাপাশি ওয়ানডেতেও ৫হাজারের উপর রান করেন তিনি । পাকিস্তানের সাবেক এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার টেস্টে দশটি শতকের দেখা পেলেও ওয়ানডেতে ছিল তা অধরা।
১৬২টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ৪২টি হাফসেঞ্চুরিতে ৫১২২রান করতে সমর্থ হন এই সাবেক ব্যাটসম্যান। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য তার ১৩ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মাত্র দুইবার তিনি ৯০ এর ঘরে যেতে পেরেছিলেন। ২০১১ সালে ন্যাপিয়ারে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৯৩রান করেন তিনি। অপরটি ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৯৬রানে অপরাজিত থাকেন।
২. ডোয়াইন স্মিথ(ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
ক্যারিবিয়ান এই টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার খুবই ফ্যাকাসে বলা যায়। ক্রিকেটের সীমিত ওভারের খেলায় তিনি ছিলেন খুবই দক্ষ। টি-টুয়েন্টি ফর্মেটে যখন পাচঁটি শতক ও ৪৩টি অর্ধশতকসহ তার নামের পাশে 'সাত হাজার' রান, তখন ক্রিকেটের ওডিআই ফর্মেটে তাকে রানের জন্য লড়াই করতে দেখা গেছে।
একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একশরো বেশি ম্যাচ খেলা সত্বেও একটি সেঞ্চুরিরও দেখা পাননি এই উইন্ডিজ ক্রিকেটার। তিনি পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে মাত্র একবার শতকের খুব কাছাকাছি যেতে পেরেছিলেন।২০১৪ সালে দিল্লিতে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে ৯৭ রান করতে সমর্থ হন এই ব্যাটসম্যান।
ফলে ভাগ্যদেবীর বিমুখতায় মাত্র ৩ রানের জন্য সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত হন এই ক্রিকেটার। তার এগারো বছরের ওডিআই ক্যারিয়ারের দিকে থাকালে দেখা যাবে , তিনি ১০৫টি ম্যাচ খেলে ১৮.৫৭ ব্যাটিং গড়ে মোট ১৫৬০ রান করতে সক্ষম হন। ২০১৭ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান ক্রিকেটের স্বল্পদৈর্ঘ্য সংস্করনের এই জনপ্রিয় ক্রিকেটার।
৩. চামারা কাপুগেদেরা (শ্রীলঙ্কা)
শ্রীলঙ্কার সাবেক এই ব্যাটসম্যানের দলে ঠিকে থাকার রহস্য অনেকটা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের মতো! কেন না চামারা কাপুগেদেরা একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কিভাবে সেঞ্চুরিহীন একশরো অধিক ম্যাচ খেলেছেন তা বিস্ময়ই বটে। এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের অভিষেক ঘটে ২০০৬ সালে পার্থে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। শ্রীলঙ্কার দলের হয়ে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই খেলোয়াড় টপঅর্ডার কিংবা মিডলঅর্ডারেই ব্যাট করতেন।
ওয়ানডেতে এই ক্রিকেটারের ব্যাটিং গড় প্রায় ২১ যা একজন মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানের নামের পাশে বড়ই বেমানান! তিনি একজন স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হওয়া সত্ত্বেও ওয়ানডেতে পর্যাপ্ত সংখ্যক রান করতে পারেননি। তিনি শ্রীলঙ্কার জার্সি জড়িয়ে মোট ১০২ টি ওয়ানডে খেলেছেন যার মধ্যে ৮টি হাফ সেঞ্চুরি ছিল। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার ক্যারিয়ার সেরা রান হলো ৯৫, সেটি আসে ২০০৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
৪. জিমি এডামস ( ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
একজন মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান দরকার? জিমি এডামস কে ডাকো। উইকেটরক্ষক দরকার? জিমি এডামসের হাতে গ্লাভস তুলে দাও। বাঁহাতি স্পিনারের দরকার? জিমি'র হাতে তুলে দাও বল। জিমি এডামস এমন একজন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার ছিলেন যাকে কিনা দলের সব প্রয়োজনে ব্যাবহার করা হতো।
তিনি ব্যাটিং লাইনের ২ থেকে ৯ নং অবস্থান পর্যন্ত ব্যাট করেছেন এবং সবচেয়ে বিস্ময়কর যে তথ্য সেটা হলো তিনি যেকোন অবস্থানে ২৫টি'রো বেশি ম্যাচে ব্যাট করতে পারেন নি। দলের একজন সদস্য হিসেবে তার ভূমিকায় স্পষ্টতার অভাব ছিলো। আর যে কারনে ১২৭টি ওয়ানডে খেলেও একটি সেঞ্চুরিরও দেখা পাননি এই ক্রিকেটার।
একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় , প্রধানত মিডলঅর্ডারে ব্যাট করে প্রায় ৩০ ব্যাটিং গড়ে ২ হাজারেরো বেশি রান করেছেন জিমি এডামস। ও.ইন্ডিজের সাবেক এই ব্যাটসম্যান টেস্টে ১টি ডাবল সেঞ্চুরিসহ ৬টি শতক হাঁকালেও ওয়ানডেতে তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি তিনি । ওয়ানডেতে ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ৮২ রান করেন সাবেক এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার।
৫. গ্রাহাম থ্রোপ ( ইংল্যান্ড)
তিনি শুধু ইংল্যান্ডের একজন পরিপূর্ণ ব্যাটসম্যানই ছিলেন না, তাকে ইংল্যান্ডের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যানও বলা হয়। সাবেক এই ইংলিশ ব্যাটসম্যানের টেস্ট ক্যারিয়ার যতটা ঝলমলে ছিল ওয়ানডে ক্যারিয়ার ঠিক ততোটাই নিষ্প্রভ ছিল । তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে সাদা পোশাকে ১০০টি টেস্ট খেলে ১৬টি শতকসহ ( যার মধ্যে অপরাজিত ১টি দ্বিশতকও ছিলো) তুলে নেন প্রায় ৭০০০ রান।
অপরদিকে ৮২টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ৪০ ব্যাটিং গড়ে ২১টি হাফ সেঞ্চুরির সুবাদে মোট ২৩৮০ রান করেন তিনি।সমস্ত ওডিআই ক্যারিয়ার জুড়ে একটি সেঞ্চুরিরও দেখা না পাওয়া এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান তার পুরো ক্যারিয়ারে ৯০ এর ঘরেও একবার যেতে পারেননি। ওয়ানডেতে তার ক্যারিয়ার সেরা রান হলো ৮৯। এছাড়াও সাবেক এই ক্রিকেটার প্রথম শ্রেনি ক্রিকেট ও লিস্ট 'এ' ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ৪৯টি শতক হাঁকানোর পাশাপাশি ৩২হাজার রান করেন।
তথ্যসূত্র : www.sportskeeda.com
আরিফুল ইসলাম সোহান