খেলাধুলা

শোয়েব আখতার : রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস হয়ে ওঠার গল্প

খেলাধুলা বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০১৯ ০৭:২৪:২৯

শোয়েব আখতার যিনি পাকিস্তান ক্রিকেট দলের একজন অন্যতম ক্রিকেটার ছিলেন।  প্রায় ১৪ বছর পাকিস্তানের জার্সি জড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিনি ফর্মেটেই  বিচরন করেছেন তিনি।  তাকে ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা দ্রুতগতির বোলার হিসেবে অভিহিত করা হয় । কারণ ২০০৩ সালের আইসিসি  বিশ্বকাপের গ্রুপ স্টেজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রতি ঘন্টায় ১৬১.৩ কিলোমিটার গতির একটি বল করে ক্রিকেটে এক অনন্য নজির গড়েন এই বোলার। এছাড়া বিশ্বের  প্রথম বোলার  হিসেবে তিনি ঘন্টা প্রতি ১০০ মাইল বেগে বল করেছেন দুইবার যা ক্রিকেটের ইতিহাসে অদ্বিতীয়! পাকিস্তানি সাবেক এই ফাস্ট বোলারকে তার ভক্তরা রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস ও টাইগার নামে ডাকতেন। কারণ ক্রিকেটে শোয়েবের অভিষেক হয়েছে মূলত রাওয়ালপিন্ডিতে, আর তখন থেকেই ভক্তরা তাকে ভালবেসে  এই  নামে ডাকা শুরু করেন। প্রিয় পাঠক এই কিংবদন্তির জানা-অজানা অনেক বিষয় নিয়ে চলুন জেনে আসা যাক।

পারিবারিক  জীবন :
 
১৯৭৫ সালের ১৩ই আগস্ট পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির মুরগাহ নামক জায়গায় এক গরীব মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আখতার।  তিনি পেশায় একজন প্রহরী ছিলেন। 'এটক' তৈল পরিশোধন পেট্রোল স্টেশনে প্রহরী হিসেবে কাজ করতেন তিনি । তার মায়ের নাম হামিদা আওয়ান। কিশোরী থাকাকালীন সময়েই শোয়েবের বাবার সাথে বিয়ে হয়ে যায় তার ।

 পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে শোয়েব আখতার হলেন চতুর্থ। তার বড় তিন ভাই হলেন  ওবায়েদ, তাহির, শাহিদ এবং বোন শুমালিয়া হলেন তার ছোট। ব্যাক্তিগত জীবনে ২০১৪ সালের ২৫জুন রোবাব খান নামের একজনকে বিয়ে করেছেন রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেসখ্যাত এই বোলার ।  দাম্পত্য জীবনে তিনি একটি পূত্র সন্তানের জনক।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উত্থান পতন :
 
টরেন্টোতে  ১৯৯৬ সালের সাহারা কাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার কথা থাকলেও  ত্রুটিপূর্ণ আচরন ও নিয়ম শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে  পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয় ।

১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল টেস্ট খেলতে পাকিস্তান পাড়ি জমিয়েছিল। সেই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে খেলার সুযোগ না পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে নিজের হোমটাউনে খেলার সুযোগ পান এই ক্রিকেটার।  ফলে রাওয়ালপিন্ডিতেই নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিষেক ঘটান এই স্পিডস্টার। উক্ত ম্যাচে একজন শান্তিপ্রিয় ও বিনয়ী ক্রিকেটার হিসেবে খেলে ২টি উইকেট লাভ করেন তিনি।

১৯৯৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন শোয়েব আখতার। হাঁটুর ইঞ্জুরি নিয়েও দক্ষিণ আফ্রিকা দলের মোকাবেলা করেন তিনি।  তার অসাধারণ গতি ও বাউন্সের কাছে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা  সহজেই ধরাশায়ী হন। মাত্র  ৪৩ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট নিয়ে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তানকে জিতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।

  ১৯৯৯ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ  শুরু হওয়ার পূর্বে পাকিস্তান ক্রিকেট দল ভারতের বিপক্ষে একটি সিরিজ খেলে। শোয়েব আখতার উক্ত সিরেজে অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন । মূলত সেখান থেকেই সবার নজরে আসা শুরু করেন তিনি। তাছাড়া ১৯৯৯ সালের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে স্বাগতিক  ভারতের বিপক্ষে তিনি একাই আট উইকেট নিয়ে উক্ত ম্যাচে পাকিস্তানকে জিতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও ১৯৯৯ সালের আইসিসি বিশ্বকাপে একজন পাকিস্তানি ক্রিকেটার হিসেবে তিনি সফল ছিলেন। পাশাপাশি ২০০২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজেও ভালো খেলা উপহার দেন তিনি।

  পাকিস্তানের সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ার কারণে তার ক্যারিয়ারে অত্যধিক মাত্রায় এর প্রতিকূল প্রভাব পড়ে।  ২০০৩ সালের আইসিসি বিশ্বকাপে বাজে পারফরমেন্সের পর পাকিস্তান ক্রিকেট দলের  সাবেক অধিনায়ক ও ফাস্ট বোলার ওয়াকার ইউনুসের সাথে মৌখিক বাদানুবাদে  জড়িয়ে পড়েন শোয়েব।

এছাড়াও তিনি বল টেম্পারিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন। ২০০৬ সালের ১৬ই অক্টোবর মাদকদ্রব্য সেবনকারী  প্রমাণিত হওয়ার অপরাধে শোয়েব আখতার ও মোহাম্মদ আসিফকে পাকিস্তান ক্রিকেট থেকে  সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড।

ক্লাব ক্যারিয়ার :  

ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ঘরোয়া  ক্রিকেট লিগ ইংল্যান্ডের কাউন্টি লিগে খেলেছেন শোয়েব আখতার।  উক্ত লিগে ২০০১ সালে সামারসেট ক্লাবের হয়ে খেলেন। পরে  ২০০৩ ও ২০০৪ সালে ডারহাম ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলেছেন এই স্পিডস্টার।  এছাড়াও ২০০৫ সালে  ওরচেস্টারশায়ার ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন এই ক্রিকেটার।

 উক্ত ক্লাবগুলোতে কিছু ভালো ইনিংস খেললেও দলের প্রতি তার যে দায়িত্ব ছিল সেটা পুরোপুরিভাবে পালন করতে না পারায় তাকে সমালোনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। একসময়ের পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বোলিংয়ের প্রাণভোমরা  সাবেক এই খেলোয়াড় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ারলিগ মাতিয়েছেন।  তিনি জনপ্রিয় অভিনেতা শাহরুখ খানের মালিকানাধীন কলকাতা নাইটরাইডার্সের হয়ে খেলেছেন।

রেকর্ডসমূহ :   

২০০৩ সালে  দুটি  টেস্ট ম্যাচ খেলে ১০টি করে মোট ২০ উইকেট লাভ করেন তিনি।  উক্ত ম্যাচগুলির মধ্যে একটি ছিল সফরকারী বাংলাদেশের বিপক্ষে এবং অন্যটি ছিল স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।  তার টেস্ট ক্যারিয়ারে তিনি দু'টি টেস্টে ম্যাচ সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জিততে সক্ষম হন। তাছাড়া সীমিত ওভারের খেলায় তিনি ১০টি ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার জিতেন।  

ক্রিকেট বিশ্বের প্রথম বোলার হিসেবে  ঘন্টায় ১০০ মাইল গতিতে বল করার পাশাপাশি দুইবার এই মাইলফলক স্পর্শ করে ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় স্মরনীয় হয়ে আছেন তিনি। অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ মনে করেন রেকর্ড কিংবা পরিসংখ্যান দিয়ে শোয়েব আখতারের মতো বিখ্যাত বোলারের উজ্জ্বল ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে  বিচার করা যায় না !

অবসর :  

২০১১ সালের আইসিসি বিশ্বকাপের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান পাঞ্জাবের এই দ্রুতগতির বোলার। বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও ধারাভাষ্যকার হিসেবে টেলিভিশনের পর্দায় তাকে দেখা যাচ্ছে।


তথসূত্র :  
www.sportskeeda. com
www.superstarsbio.com

লেখকঃ আরিফুল ইসলাম সোহান