
ক্রিকেটের ইতিহাসে কিছু চমৎকার ঘটনা
বিশ্বে যতগুলো খেলা রয়েছে তার মধ্যে ক্রিকেটকে সবচেয়ে পুরনো খেলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ক্রিকেটকে বলা হয় আনপ্রেডিক্টেবল গেইম কারণ এই খেলায় যেকোন সময় ম্যাচের রঙ পাল্টে যায়। একটি দল খুব ভালো খেলেও শেষ মুহুর্তে পরাজয়ের গ্লানিকেই বরণ করে নিতে হয়।
সেই সুবাদে প্রতিবছর বিরামহীনভাবে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন সব রেকর্ডও । এই রেকর্ডগুলোই বলে দেয় প্রতিবছর ক্রিকেটে কতটা অঘটনই না ঘটছে! আজ থেকে প্রায় ১৪২ বছর আগে ১৮৭৭ খ্রীষ্টাব্দের ১৫ মার্চ অনুষ্টিত হয় প্রথম অফিশিয়াল টেস্ট ম্যাচ।
সেই থেকে এখন অবধি ক্রিকেট অন্যতম জনপ্রিয় খেলা হিসেবে বিশ্ব দরবারে রাজত্ব করে চলছে। দুটি শতাব্দী ফেলে এসে আরেকটি নতুন শতাব্দীকাল স্পর্শ করেছে ক্রিকেট। এই সময়ে ক্রিকেট থেকে যেমন অনেক নিয়ম বাদ দেওয়া হয়েছে ঠিক তেমনি অন্তর্ভুক্তও করা হয়েছে অনেক নতুন নিয়ম।
ক্রিকেট শুরুর দিকে যেমন টেস্ট ফর্মেট ছিল এখনও আছে কিন্তু তার সাথে যোগ হয়েছে আরো দুটি নতুন সংস্করন। পূর্বে সাদা জার্সি জড়িয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে খেলা হলেও বর্তমানে ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি ফর্মেটে রঙিন জার্সি জড়িয়েই ক্রিকেটাররা খেলে থাকেন।
ক্রিকেটের শুরু থেকে আজ অবধি ক্রিকেটে অনেকগুলো রেকর্ড হয়েছে তবে কিছু কিছু রেকর্ড এখন পর্যন্ত বিরল। আর যেসব খেলোয়াড়েরা এই রেকর্ডগুলা করেছেন তাদের নামগুলো খুদাই করে লেখা হয়েছে ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায়। পাশাপাশি ভক্তকুল, ক্রিকেট বিশ্লেষকদের নিকট থেকে কুড়িয়েছেন কিংবদন্তির খেতাব। প্রিয় পাঠক আপনাদের সামনে ক্রিকেটের কিছু অজানা ও চমৎকার তথ্য তুলে ধরার জন্যই আমাদের আজকের এই আয়োজন সাজানো হয়েছে।
১. উইকেট শব্দটা সবচেয়ে বেশি বোলারদের সাথে জড়িয়ে আছে। ক্রিকেটে এই বোলারদের নিয়ে অসংখ্য রেকর্ড আছে কিন্তু ভারতীয় মিডিয়াম ফাস্ট বোলার ভুবেনেশ্বর কুমার সেদিক থেকে একটু আলাদাই বটে ! ক্রিকেট ইতিহাসে তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি ক্রিকেটের তিন ফর্মেটেই তিনজন ব্যাটসম্যানকে বোল্ড আউট করে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন।
২. একটা সময় ছিল যখন শিবনারায়ণ চন্দরপল ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট দলের চিরচেনা মুখ ছিলেন । সেইসময় টেস্টে তিনি ক্যারিবিয়ানদের অনেককিছু দিয়েছেন । টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে একজন শিবনারায়ণ চন্দরপলকে ক্যারিবিয়ানদের পাশাপাশি গোটা ক্রিকেট বিশ্ব মনে রাখবে। তার টেস্ট ক্যারিয়ারে তিনি ৩০টি শতক হাঁকিয়েছেন যার মধ্যে ১৮টি শতকে তিনি অপরাজিত ছিলেন। অপরাজিত ১৮টি শতক হাঁকিয়ে ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে একটি ব্যাতিক্রমী রেকর্ড গড়েন তিনি।
৩. দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের বর্তমান অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় নিজের নামকে ভিন্নভাবে লিখিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর অনেক ক্রিকেটারই সুনাম ছড়িয়েছেন কিন্তু নিজের ১০০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ১টি ইনিংসেও ডাক কিংবা শূন্যরানে আউট হননি এমন ব্যাটসম্যান খুঁজে পাওয়া কঠিনই বটে । সেদিক থেকে এই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি অভিষেক ইনিংস থেকে শুরু করে ১০০টি ইনিংস পর্যন্ত খেলে কোনটিতেই শূন্যরানে আউট হন নি।
৪. টেস্ট খেলুড়ে যেসকল দেশ রয়েছে তারা প্রত্যেকেই টেস্টে কমপক্ষে একবার হলেও হোয়াইট ওয়াশ কিংবা ধবলধোলাইয়ের স্বাদ নিয়েছে । কিন্তু সকল টেস্ট খেলুড়ে দেশকে কমপক্ষে ১বার হলেও হোয়াইট ওয়াশ করতে সক্ষম হয়েছে ওয়ানডেতে ৫বারের বিশ্বকাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়া।
৫. একটি দল প্রতিপক্ষ দলের বিপক্ষে তখনই জিতে যায় যখন রান কিংবা উইকেটে বিপক্ষ দল থেকে এগিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে নিজ দলকে এগিয়ে রাখতে দলের খেলোয়াড়রা আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকেন । কেউ কেউ দলকে জেতাতে ব্যার্থ হন আবার অনেকেই জেতাতে সক্ষম হন। দলকে জেতাতে যারা সবচেয়ে বেশি অবদান রাখেন তাদের হাতেই তুলে দেওয়া হয় ম্যাচ সেরার পুরষ্কার। কিন্তু ওয়ানডেতে পরপর ৪টি ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরষ্কার পাওয়ার রেকর্ড আছে মাত্র একজন ক্রিকেটারের দখলে , তিনি হলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী।
৬. ক্রিকেটের তিন ফর্মেটেই অনেক বোলাররা অসংখ্য মেইডেন ওভার নিয়েছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেইডেন কে নিয়েছেন? প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যায়। তিনি হচ্ছেন সাবেক শ্রীলঙ্কান স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন। তিনি সমস্ত ক্যারিয়ার জুড়ে ১৯৯২টি মেইডেন ওভার নিয়েছেন যা এখন পর্যন্ত ক্রিকেটের ইতিহাসে অদ্বিতীয়!
৭. যারা ক্রিকেটখেলা দেখে থাকেন তারা অবশ্যই হ্যাট্রিকের নাম শুনেছেন। একটি হ্যাট্রিকের দেখা পেতে হলে ভাগ্যের সাথে ভাল পারফরমেন্সের দরকার পড়ে। আর সে কারণেই হয়ত সচরাচর ক্রিকেটে হ্যাট্রিকটা খুব কমই দেখা যায়। একজন বোলার তখনই একটি হ্যাট্রিকের দেখা পান যখন পারফরমেন্সের সাথে তার ভাগ্যও সঙ্গ দেয় থাকে। ক্রিকেটের ইতিহাসে টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে ৪টি হ্যাট্রিক করে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক হ্যাট্রিকের মালিক পাকিস্তানি সাবেক পেসার ওয়াসিম আকরাম।
৮. একটি ম্যাচ জেতাতে একজন বেস্ট ফিনিশারের দরকার হয়। ফিনিশিংয়ে অনেক ব্যাটসম্যান চার কিংবা ছক্কার মাধ্যমে ম্যাচের ইতিও টেনে থাকেন কিন্তু সেটা সবসময় নয়। ক্রিকেট বিশ্বে এমন একজন বেস্ট ফিনিশার আছেন যিনি অত্যান্ত ঠান্ডা মাথায় ম্যাচের ফিনিশিং দিয়ে থাকেন। হয়তো অনেকেই বুঝে ফেলেছেন আমি কার কথা বলছি! হ্যাঁ আমি মাহিন্দ্র সিং ধোনির কথাই বলছি যিনি খুব সাবলিলভাবেই ভারতকে তার বেস্ট ফিনিশিংয়ে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন। এছাড়াও শ্বাসরুদ্ধকর ৯টি ম্যাচে ছয় মেরে ভারতকে জিতিয়ে ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে রেকর্ডবুকে নাম লিখান তিনি।
৯. অনেক ক্রিকেটারই নিজেদের অভিষেক ম্যাচে শতক হাঁকিয়েছেন। কিন্তু অভিষেক ম্যাচে উভয় ফর্মেটে কেবল একজনই সেঞ্চুরি করেছেন। তিনি হলেন ভারতের তরুন ব্যাটসম্যান কে এল রাহুল। তিনি ওয়ানডে ও টেস্টের অভিষেক ম্যাচে শতক হাঁকিয়ে একটি অসাধারণ রেকর্ড গড়েন।
১০. ক্রিকেটে অনেক মজার ঘটনা ঘটলেও কিছু কিছু ঘটনা কাকতালীয়ভাবে ঘটে যায়। অ্যালেক স্টুয়ার্ট নামে এক ইংলিশ ক্রিকেটারের জন্ম ৮.৪.৬৩ সালে এবং টেস্টে তার মোট রানও হলো ৮৪৬৩ রান। যে ব্যাপারটা অনেক মজাদার ও কাকতালীয়।
তথ্যসূত্র : www.sportskeeda.com
লেখকঃ আরিফুল ইসলাম সোহান