সন্দিপ লামিচানে : এক বিস্ময়কর নেপালি ক্রিকেটারের গল্প
সন্দিপ লামিচানে একজন নেপালি ক্রিকেটার যিনি বর্তমানে নেপাল জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য। একজন লেগ ব্রেক বোলার হিসেবে এই তরুন ক্রিকেটার সারা বিশ্বে বেশ পরিচিত। নেপালের জার্সি জড়িয়ে এই লেগি বোলার অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে তার অসাধারণ বোলিংয়ে তুলে নেন ১৪টি উইকেট। নামিবিয়া, আয়ারল্যান্ড, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের বিপক্ষে মাঠ মাতিয়েছেন এই তরুন ক্রিকেটার। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বের পঞ্চম বোলার হিসেবে হ্যাট্রিক করার পাশাপাশি তুলে নেন পাঁচ উইকেট। ২০১৮ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ আইপিএলের নিলামে লামিচানেকে ২ মিলিয়ন রুপিতে কিনে নেয় দিল্লি ডেয়ার ডেভিলস। যার ফলে নেপালের ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে আইপিএলে পা রাখার সুযোগ পান এই ক্রিকেটার।
স্পিনের রাজা খ্যাত অপার সম্ভাবনাময়ী এই লেগি বোলার, তার স্পিনের জাদুতে ২০১৮ সালের আইসিসির দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে ৬ ম্যাচে বল করে তুলে নেন ১৮টি উইকেট। উক্ত টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হিসেবে জিতে নেন প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরষ্কার। সন্দিপ লামিচানের এমন প্রতিভা দেখে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক তার নিজস্ব মালিকানায় প্রতিষ্টিত 'মাইকেল ক্লার্ক একাডেমি' সিডনিতে অনুশীলনে যাওয়ার জন্য তাকে আমন্ত্রন জানান।
ক্যারিয়ার : চিতান ক্রিকেট একাডেমীতে সন্দিপ লামিচানের ক্রিকেটের হাতেখড়ি শুরু হয়। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তার বোলিং দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে কানাডিয়ান কোচ পোবুদু দাসানায়েকে তাকে ইয়ুথ ক্যাম্পের জন্য নির্বাচিত করেন। ২০১৬ সালে নজরকাড়া পারফরমেন্সের জন্য নেপালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে জায়গা করে নেন তিনি। উক্ত বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তার চমৎকার বোলিং নৈপুণ্যে আইরিশ ব্যাটসম্যানরা ধরাশায়ী হন। লরকান টাকার, এডাম ডেনিসন ও ফিয়াচরা টাকারকে পরপর তিনি বলে আউট করে হ্যাট্রিকের দেখা পান এই বোলার । মাত্র ২৭রান খরচ করে ৫উইকেট শিকার করা এই বোলার ম্যাচ সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।
অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের ৫ম ম্যাচে শক্তিশালী পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫৩ রানের বিনিময়ে তিনজন ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান এই বোলার। উক্ত টুর্নামেন্টের ৭ম ম্যাচে নামিবিয়ার বিপক্ষে ৩৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট লাভ করেন তিনি। টুর্নামেন্ট শেষে ১৪টি উইকেট শিকার করেন এই তরুন ক্রিকেটার। ২০১৬ সালের এপ্রিলের ১৬ তারিখ আইসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগ ২০১৫-'১৭ মৌসুমে নামিবিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। ২০১৬ সালের মে মাসে হংকংয়ের ক্রিকেট লিগ টুয়েন্টি-টুয়েন্টি ব্লিটজে সন্দিপ লামিচানের অসাধারণ পারফরমেন্স দেখে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার মাইকেল ক্লার্ক। একই বছরের সেপ্টেম্বরে সন্দিপ লামিচানেকে 'ওয়েস্টার্ন সাবার্বস ক্রিকেট একাডেমী' সিডিনিতে খেলার আমন্ত্রন জানান তিনি।
তার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে এসিসি অনূর্ধ্ব ১৯ এশিয়া কাপে মালেশিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৪৫ রানের বিনিময়ে ৫জন ব্যাটসম্যানকে আউট করেন তিনি। ইতোমধ্যে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সব জায়গায়, যার দরুন তার উপর আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজি গুলির চোখ পড়ে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে আইপিএলের নিলামে সন্দিপ লামিচানেকে দলে ভেড়ায় দিল্লি ডেয়ার ডেভিলস। যার ফলে প্রথম কোন নেপালি ক্রিকেটার হিসেবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ( আইপিএল)খেলার গৌরব অর্জন করেন তিনি ।
একই বছর জানুয়ারিতে আইসিসির ২য় বিভাগ ক্রিকেট লিগে খেলার জন্য নেপাল দলে জায়গা পান তিনি। উক্ত টুর্নামেন্টে তাদের প্রথম ম্যাচ নামিবিয়ার বিপক্ষে ছিল। সেই ম্যাচে ৮ ওভার ২ বলে ১৮ রান খরচ করে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন এই মেধাবী লেগি বোলার। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ৩০ রানের বিপরীতে শিকার করেন ৩ উইকেট। এরপরের ম্যাচে তার আঁটসাঁট বোলিংয়ে কেনিয়ার বিপক্ষে মাত্র ২০ রানের বিনিময়ে ৫জন ব্যাটসম্যান আউটের শিকার হন। আইসিসি এমন চমৎকার ক্রিকেটীয় দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট হিসেবে অবশেষে সন্দিপ লামিচানের নাম ঘোষনা করে।
পারিবারিক জীবন : ২০০২ সালের ২রা আগস্ট নেপালের সায়াংজা জেলার আরচাউর তালপুখারি নামক জায়গায় জন্ম নেন সন্দিপ লামিচানে। তার বাবা চন্দর নারায়ণ লামিচানে পেশাগতভাবে ইন্ডিয়ান রেলওয়েতে কাজ করেন । মা কপিলা দেবী হচ্ছেন একজন গৃহিণী। তারা দুই ভাই ও এক বোন । ভাইয়ের নাম মোহন লামিচানে এবং বোনের নাম ইন্দো লামিচানে। সন্দিপ তার শৈশব কাঠিয়েছেন ভারত, সেখানে তিনি চতুর্থ শ্রেনি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পরে দেশে এসে চিতান ক্রিকেট একাডেমিতে যোগ দেন। এখানে তাদের প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন নেপাল জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক রাজু খাদকা।
Soure: www.thefamouspeople.com
লেখকঃ আরিফুল ইসলাম সোহান