ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের কিছু মজার ঘটনা
ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। ক্রিকেট নিয়ে স্মরণীয় অনেক ঘটনা আছে। ঘটনাগুলো বিভিন্ন সময় উচ্চারিত হলেও তা নতুনের মতোই আনন্দ দেয়। বিশেষ করে ক্রিকেটাররা মাঠে এবং মাঠের বাইরে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত প্রচুর মজার কাণ্ড করেন তা ক্রিকেট পাগল মানুষদের আনন্দ দেয় বৈকি! এই ঘটনাগুলো কখনও তাদের ধৈর্যচ্যুতি, কখনও প্রতিবাদ, কখনও আনন্দ কিংবা বিরক্তির প্রমাণ দেয়। তেমন কিছু ঘটনা নিয়েই আমাদের আজকের লেখা।
একবার দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে খেলা হচ্ছিল। ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যালান ল্যাম্বকে বল করছিলেন অ্যালান ডোনাল্ড। ডোনাল্ডকে তখন তার বিখ্যাত গতির জন্য ‘সাদা বিদ্যুৎ’ নামে ডাকা হতো। কিন্তু তার বল ল্যাম্ব সচ্ছন্দে খেলছিলেন। একটা বল কাভার ড্রাইভ দিয়ে সোজা বাউন্ডারির বাইরেও পাঠিয়ে দিলেন তিনি। এবার ভিন্ন পথ ধরলেন ডোনাল্ড। সে পরের বল করার আগে ল্যাম্বকে হুঁশিয়ার করে বলল, ল্যাম্বি, ড্রাইভ করতে চাইলে একটা গাড়ি ভাড়া করো গে যাও।
কিন্তু ল্যাম্ব এ কথা পাত্তা দিলেন না। উল্টো পরের বলেই পুনরায় চমৎকার আরেকটা কাভার ড্রাইভ করে বললেন, যাও, এবার গাড়িটা পার্ক করে এসো।
আরেকটা ঘটনার কথা বলি। টেস্ট ম্যাচে শেন ওয়ার্ন অনেকক্ষণ ধরেই চেষ্টা করছিলেন অর্জুনা রানাতুঙ্গাকে প্রলুব্ধ করতে যাতে সে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসে এবং শট খেলার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। রানাতুঙ্গা অবিচল ক্রিজে দাঁড়িয়ে ডিফেন্স করেই যাচ্ছেন। তখন পেছন থেকে ইয়ান হিলি বললেন, ওয়ার্নি, বলটা যেখানে ফেলছ সেখানে বরং একটা চকলেট রেখে দাও। তাইলেই হয়তো সে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারে!
কথাটা অর্জুনা রানাতুঙ্গা কীভাবে নিয়েছিলেন তা জানা যায়নি। কিন্তু ভারতের উইকেট কিপার পার্থিব প্যাটেলের কথায় স্টিভ ওয়াহ কিন্তু ভীষণ রেগে গিয়েছিলেন। ঘটনা হলো অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের খেলা হচ্ছে। টেস্ট ম্যাচ। খেলাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল স্টিভ ওয়াহ’র কারণে। কারণ স্টিভের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার শেষ টেস্ট খেলতে নেমেছেন। স্টিভ ক্রিজে এসে দাঁড়াতেই পেছন থেকে পার্থিব প্যাটেল বললেন, শেষবারের মতো আউট হওয়ার আগে তোমার বিখ্যাত স্লগ সুইপ খেলে নাও।
জবাবে স্টিভ ওয়াহ বলেছিলেন, সম্মান দেখিয়ে কথা বলো। আমি যখন আমার প্রথম টেস্ট খেলতে নামি, তুমি তখন ডায়াপার পরতে!
১৯৯১ সালে অ্যাডিলেড টেস্টে ব্যাটিং করছিলেন জাভেদ মিয়াঁদাদ। বোলার ছিলেন মার্ভ হিউজ। খেলার ফাঁকে হিউজকে ‘মোটু বাস কন্ডাক্টর’ বলে খ্যাপাচ্ছিলেন মিয়াঁদাদ। কিছুক্ষণ পরই হিউজের বলে আউট হয়ে মিয়াঁদাদ যখন প্যাভিলিয়নের পথ ধরলেন, মুচকি হেসে হিউজ বলেছিলেন, টিকিট প্লিজ! আরেকবার শন পোলকের বলে নাস্তানাবুদ হচ্ছিলেন রিকি পন্টিং। বল হাতে বাঁকা হাসি হেসে পোলক এগিয়ে গেলেন পন্টিংয়ের দিকে। তারপর বললেন, তুমি ক্রিকেট বল চেনো তো? এটা লাল, গোলাকার, ওজন পাঁচ আউন্সের কাছাকাছি। পরের বলেই ছক্কা হাঁকালেন পন্টিং। এবার সে পোলকের কাছে গিয়ে বলল, তুমি তো জানো বলটা দেখতে কেমন। যাও, খুঁজে নিয়ে এসো!
ক্রিকেট মাঠে স্লেজিং নতুন কোনো ঘটনা নয়। অস্ট্রেলিয়ানরা এ জন্য বিখ্যাত অথবা কুখ্যাত। একবার এক সাংবাদিক ব্রায়ান লারার পেছনে লাগলেন সাক্ষাত্কারের জন্য। লারা কিছুতেই সাক্ষাত্কার দেবেন না। সাংবাদিকও নাছোড়বান্দা। শেষ পর্যন্ত রফা হলো- সাংবাদিক একটি মাত্র প্রশ্ন করতে পারবেন। প্রশ্নটা লারার জন্য সবচেয়ে বিব্রতকর হলেও সমস্যা নেই, তিনি জবাব দেবেন।
সাংবাদিক ভদ্রলোক লারার জীবনের আদ্যোপান্ত ঘেঁটে দেখলেন, তাকে চরম বিব্রত করার মতো একটি প্রশ্ন আছে। লারা একবার স্টিভ ওয়াহর সঙ্গে মাঠে খুব তর্কাতর্কি করেছিলেন। বলা হয়, লারা তাকে বাজে একটা গালিও দিয়েছিলেন। সাংবাদিক এ ঘটনাটাকেই ফাঁস করতে চেয়ে বললেন, স্টিভ ওয়াহ আপনাকে গালি দেওয়ার পর আপনি কী বলেছিলেন?
লারা একগাল হেসে বললেন, বলেছি, হাই স্টিভ!
সাংবাদিক এবার জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কী বললেন?
লারা ততক্ষণে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন। তারপর সামনের দিকে পা ফেলে বললেন, আপনার একটাই প্রশ্ন করার কথা ছিল। সেটা হয়ে গেছে।
ক্রীড়া সাংবাদিকরা ক্রিকেটারদের মুখ থেকে এমন কথা শুনতে চান যা পাঠকের মধ্যে কৌতূহল জাগায়। একবার তো অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে অ্যাশেজ হেরে ইংল্যান্ডের একেবারে নাস্তানাবুদ অবস্থা। ফলাফলের জন্য সবাই অধিনায়ককে দায়ী করতে শুরু করল। তখন অধিনায়ক ছিলেন মাইক গ্যাটিং। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নবাণে তিনি জর্জরিত হয়ে খুব বিরক্ত হলেন। কিছুদিন পর এক সাংবাদিক তার কাছে জানতে চাইল, আপনার কি মনে হয় না, ফলাফলের জন্য আপনি এবং নির্বাচকেরা দায়ী?
মাইক গ্যাটিং বললেন, সাংবাদিকেরা দায়ী বলে আমার মনে হয় না। আপনারা যা খুশি লিখতে পারেন।
এবার শুধু ক্রিকেটারের কথা নয়, দর্শকের কথা বলি। ইংল্যান্ড দলের বিখ্যাত উইকেটরক্ষক ফ্রেড প্রাইস সেদিন দুর্দান্ত খেলছিলেন। সাত সাতটি ক্যাচ লুফে নিয়ে তিনি পুরো মাঠ কাঁপিয়ে দিলেন। খেলা শেষে যখন তিনি বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, তখন এক ভদ্রমহিলা এলেন তার কাছে। বললেন, আপনার উইকেটকিপিং দেখে আমি দারুণ উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। আরেকটু হলে বোধহয় গ্যালারি থেকে পড়েই যেতাম।
প্রাইস উত্তরে বললেন, পড়ে গেলেও ভয়ের কিছু ছিল না। আজ আমি যে ফর্মে আছি, আপনাকেও নিশ্চয়ই ক্যাচ ধরে ফেলতাম।
শেষ করার আগে ক্রিকেট নিয়ে আরো দুটো আশ্চর্যজনক এবং মজার ঘটনা শোনাবো আপনাদের-
এক বলে ২৮৬ রান!
১০০ বছর আগে ইংল্যান্ডের মাঠে এই রেকর্ডটি হয়েছিল। সেদিন ভিক্টোরিয়া দলের সঙ্গে অন্য একটি দলের খেলা ছিল। ম্যাচের প্রথম বলেই ভিক্টোরিয়ার এক ব্যাটসম্যানের জোরাল শটে বল বাউন্ডারি পেরোনোর আগেই মাঠের মধ্যে থাকা একটি গাছের উঁচু ডালে আটকে যায়। এর মধ্যেই ভিক্টোরিয়ার /দুই ব্যাটসম্যান রানের জন্য দৌড় শুরু করেন। অন্যদিকে, বিপক্ষ দল বল হারিয়ে যাওয়ার সঙ্কেত দিতে আম্পায়ারের কাছে আর্জি জানায়। কিন্তু বল তো গাছের ডালে আটকে! আর স্পষ্ট দেখাও যাচ্ছে। তাই আম্পায়ার আর কী করে বল হারিয়ে যাওয়ার সঙ্কেত দিতে পারেন! বিপক্ষ দলের আবেদনে সাড়া না দিয়ে আম্পায়ার গাছের ডাল ছেঁটে বল পাড়ার নির্দেশ দেন গ্রাউন্ড স্টাফকে। এদিকে অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও বল তো আর গাছের ডাল ছেড়ে পড়ে না। তখন গ্রাউন্ড স্টাফ মরীয়া হয়ে বন্দুক থেকে বল লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়েন। বল মাটিতে পড়ে। ততক্ষণে ভিক্টোরিয়ায় ব্যাটসম্যানরা ২৮৬ বার উইকেটের মধ্যে দৌড়ে ফেলেছেন। এরপর ভিক্টোরিয়া তাদের ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করে। ভিক্টোরিয়াই এই ম্যাচে জয়ী হয়েছিল। যদিও এই ম্যাচের কোনও প্রমাণ নেই।
ধার করা ব্যাটে বিশ্বরেকর্ড
১৯৯৬ সালের কথা। পাকিস্তানের সাথে শ্রীলঙ্কার ম্যাচ চলছে। পাকিস্তান দলে রয়েছে মাত্র ১৬ বছর বয়সী একজন ক্রিকেটার। ছেলেটি খেলছে তার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তো দলের সবাই মিলে ঠিক করলো প্রথম উইকেট পড়ার পরই ব্যাট করতে নামিয়ে দেওয়া হবে তাকে।
কিন্তু সমস্যা হলো, ব্যাট করার জন্য নিজের ব্যাটই খুঁজে পাচ্ছে না। শেষে ওয়াকার ইউনুসের কাছ থেকে ব্যাট ধার করে ব্যাটিংয়ে নামল। আর নেমেই ব্যাট হারানোর সব রাগ যেন বলের উপরেই ঝাড়ল। মাত্র ৩৬ বলে করে ফেলল সেঞ্চুরী। দ্রুততম এই রেকর্ডটি কার? বলতে পারেন ছেলেটির নাম? ঠিক তাই- শহীদ আফ্রিদি।
সূত্রঃ ইন্টারনেট
সংকলনেঃ বোরহান উদ্দিন