সভ্যতা

প্রাচীন মিশরের অদ্ভুত কিছু তথ্য

সভ্যতা রবিবার, ০১ মার্চ ২০২০ ০৮:৫১:৫৭

প্রাচীন মিশর, আগ্রহ আর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই সভ্যতাকে নিয়ে ব্যবচ্ছেদ কম হয়নি৷ মিশরীয় ধর্ম, স্থাপত্যবিদ্যা, সমাজব্যবস্থা আর প্রাচীন সভ্যতাগুলোর পীঠস্থান হিসেবে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অবিরাম গবেষণা চলছে। ফলে এই সভ্যতা নিয়ে আমাদের কাছে এসেছে নানান সব তথ্য। আবার এসব তথ্যের মাঝে আছে বেশকিছু অদ্ভুত বিষয়ও। প্রাচীন মিশরের এমন কিছু অদ্ভুত তথ্য নিয়েই আলোচনা করব আজ।

মৃতরা মৃত হিসেবে গণ্য হত না

প্রাচীন মিশরীয়রা মৃত্যুর পরে আরেকটি নতুন জীবন সম্পর্কে বিশ্বাস পোষণ করত। পরজন্মে নতুনভাবে জীবন পাওয়া এবং পৃথিবীর মত জীবনযাপনে তারা বিশ্বাসী ছিল। তাই কেউ মারা গেলে তাকে মৃত ভাবা হত না। মিশরীয় ফারাওদের ব্যাপারে এই বিশ্বাসটা বিশেষভাবে প্রকাশ পেত। কোন ফারাও মারা গেলে তার দেহ মমিকরণ করে সংরক্ষণ করা হত এবং তার সমাধির সাথে মূল্যবান জিনিসপত্র যেমন স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান রেখে দেয়া হত। তারা বিশ্বাস করত মৃত্যুর পরের জীবনে এই সামগ্রী কাজে লাগবে।


প্রাণীদেরও মমিকরণ করা হত

প্রাচীন মিশরে পশুপাখির প্রতি যথেষ্ট যত্ন নেয়া হত। বিশেষ করে গৃহপালিত পশু ছিল মিশরীয়দের ভালবাসার বস্তু। অধিকাংশ ফারাওদের নিজস্ব বিড়াল এবং কুকুর থাকত যারা কিনা কখনো কখনো মানুষের চেয়ে বেশি সম্মান লাভ করত। সাধারণ মিশরীয়রা উট ও গাধা পুষত। কিন্তু এদের দিয়ে তারা কোন পরিশ্রমের কাজ করাতো না। মিশরে প্রাণীদের মর্যাদা কেমন ছিল তা জানা যায় প্রত্নতাত্ত্বিকদের দুর্লভ আবিষ্কারের মাধ্যমে। প্রত্নতত্ত্ব সাক্ষ্য দিচ্ছে যে প্রাচীন মিশরে পশুপাখিকেও মমিকরণ করা হত এবং তাদের জন্য আলাদা সমাধিও স্থাপিত হয়েছিল।


একটা পিরামিড বানাতে লাগত ১ লক্ষ শ্রমিক!

যে ভুবনবিখ্যাত স্থাপনার জন্য মিশর আজো দুনিয়াজোড়া বিখ্যাত হয়ে আছে সেই পিরামিডের পেছনের ইতিহাস বড় করুণ। রাতদিন অমানুষিক পরিশ্রমের মাধ্যমে ফারাওদের রক্তচক্ষুর সামনে দাঁড়িয়ে পিরামিড তৈরি করত শ্রমিকরা। মমি সংরক্ষণের জন্য তৈরি এসব পিরামিড ত্রিমাত্রিক আকারে নির্মাণ করা হত। মৃতের সমাধি হিসেবে তৈরি করা হত বলে শ্রমিকগণ খুব যত্ন দিয়ে এর নির্মাণকাজ শেষ করত। কথিত আছে, একেকটি পিরামিড নির্মাণ শেষ করতে ১ লক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হত। কিন্তু আধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ১ লক্ষ নয় বরং ২০ হাজার শ্রমিক একটি পিরামিডের পেছনে নিজেদের শ্রম দিত।


সমাধি খুঁড়ার চেষ্টা করা হলে তার ওপর নেমে আসবে অভিশাপ


প্রাচীন মিশরের সাধারণ জনগণের মৃতদেহ মমিকরণ করে সমাধিস্থ করা হত না। বিশেষ এই ব্যবস্থা প্রযোজ্য ছিল ফারাও,তার স্ত্রী এবং রাজকীয় ব্যক্তিবর্গের জন্য। পরবর্তী জীবন নির্বিঘ্নে পার করে দেয়ার জন্য এসব সমাধিতে মূল্যবান উপকরণ রেখে দেয়া হত। ফারাওদের সমাধি নিয়ে বিশ্বাস প্রচলিত ছিল, যেই এসব সমাধি খুঁড়তে যাবে তার উপরই নেমে আসবে দৈব অভিশাপ। এছাড়া সমাধিতে থাকা ধনসম্পদের প্রতি কেউ দৃষ্টি দিলে ফারাওদের ক্রোধ আরো বাড়বে ফলে নেমে আসতে পারে দৈব দুর্ঘটনা।


ফারাওদের সাথে সমাধিস্থ করা হত তার ব্যক্তিগত দাসকেও!

মৃত্যুর পরের জীবন স্বাচ্ছন্দ্যে কাটানোর জন্য দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, ধনসম্পদের পাশাপাশি দেবতাদের দোহাই দিয়ে ফারাওদের সাথে জীবন্ত কবর দেয়া হত তাদের ব্যক্তিগত দাসকেও। এই অমানবিক প্রথা প্রচলিত ছিল শুধুমাত্র ফারাওদের পরবর্তী জীবনকে স্বাভাবিক করে তুলতে। যদিও পরবর্তীতে এই অমানবিক প্রথা রদ করে বিকল্প একটা পদ্ধতি নিয়ে আসা হয়৷ এই পদ্ধতিতে ফারাওর ব্যক্তিগত দাসের চেহারার আদলে একটি মূর্তি তৈরি করা হত। এই মূর্তিকে বলা হত স্তাম্বি। আধুনিক খননকার্যের ফলে প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের কথা জানতে পারেন।


ফারাওদের চুল কেউ দেখতে পার‍ত না

নীলনদের দেবতা ওসিরিস। তিনি সবসময় স্বর্ণখচিত মুকুট পরিধান করতেন। ফারাওগণ নীলনদের দেবতার অনুকরণে নিজেদের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি এবং জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্যে সোনার মুকুট পরা শুরু করেন। সাধারণের মাঝে এই বিশ্বাস প্রোথিত হয় যে দেবতার ওসিরিসের প্রতিনিধি হিসেবে ফারাওর চুল কখনোই দেখা যাবে না। এমনকি ফারাওগণ নিজেদের দাড়িও স্বর্ণের আবরণ দিয়ে ঢেকে রাখতেন। এই মুকুটই ফারাওদের রাজকীয় চরিত্র গঠনে অন্যান্যদের থেকে আলাদা করে রেখেছিল।


ফারাওদের দাস ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী

ফারাওদের ব্যবহারিক জীবন নির্বিঘ্ন করতে তাদের ব্যক্তিগত দাসরা নিত্য সঙ্গ দিত। এ কাজ করার জন্য সর্বদা দাসদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে হত এবং ঝুঁকি নিয়ে হলেও স্বীয় কর্তব্য পালন কর‍তে হত। কিন্তু বিপরীতে তেমন একটা মর্যাদা  লাভ করত না এসব দাসরা। ফারাওগণ যখন খেতে বসত তখন অনর্থক মাছি দ্বারা যাতে বিড়ম্বনায় না পড়তে হয় সেজন্য ফারাওর ব্যক্তিগত দাস নিজের শরীরে মধু মেখে দূরে দাঁড়িয়ে থাকত। ফলে পতঙ্গের দল ঐ দাসের শরীরে জড়ো হত এবং ফারাও নিশ্চিন্তে তার আহার শেষ করতেন। দেবতার প্রতিনিধি ফারাওকে এভাবেই সঙ্গ দিত এসব দাসরা।

লেখকঃ উবায়দুর রহমান রাজু