সভ্যতা

ষোড়শ মহাজনপদঃ কাশী, কোশল ও সুরসেনের ইতিবৃত্ত

সভ্যতা বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০১৯ ০৭:০৬:৪৭

খ্রিস্টের জন্মের ছয় বছর আগে প্রাচীন ভারতে গড়ে উঠেছিল ১৬ টি রাষ্ট্র। জনপদের চেয়ে আকারে কিছুটা বড় এবং একটি পরিপূর্ণ রাষ্ট্রের আকারের চেয়ে ছোট হওয়ায় এই রাষ্ট্রগুলোকে বলা হত মহাজনপদ। এই মহাজনপদ গুলোর অস্তিত্ব ইতিহাসে লুকোছাপার মতই ছিল। কিন্তু আধুনিক কালের কিছু গবেষকদের ষষ্ঠ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কিছু বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মগ্রন্থ আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রাচীন ভারতের এই জনপদগুলো পাদপ্রদীপের আলোয় আসে। বৌদ্ধ গ্রন্থ অঙ্গুত্তর নিকায়, ললিত বিস্তার এবং জৈন গ্রন্থ ভপবতীসূত্রে এই মহাজনপদগুলোর নাম নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত মত দিলেও আধুনিককালে এর সমন্বয় করে ষোড়শ  মহাজনপদের ইতিহাস সামনে নিয়ে আসা হয়েছে।

কাশী মহাজনপদ

ষোড়শ মহাজনপদের মধ্যে প্রথমদিকে কাশী ছিল অনেক শক্তিশালী। বারাণসী নগর গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় বাণিজ্যিক সুবিধার পাশাপাশি কাশী কৌশলগত সামরিক সুবিধাও পেয়েছিল। কাশীর ইতিহাসে অনেক প্রভাবশালী রাজার নাম পাওয়া যায়। ধৃতরাষ্ট্র নামের এক কাশীর রাজা কাশীকে আরো শক্তিশালী করার জন্য উদ্যোগী হয়েছিলেন কিন্তু তিনি শতানিক সত্রাজিতের কাছে পরাজিত হন। অনেক গ্রন্থে কাশীর রাজাদের শক্তিমত্তা সম্পর্কে উল্লেখ পাওয়া যায়। কোশাম্বীজাতক,  কুলনাজাতক ইত্যাদি গ্রন্থে দেখা যায় কাশীর ব্রহ্মদত্তরা আরেক মহাজনপদ কোশল জয় করেছিলেন। কাশীর রাজাদের পরাক্রমতা সম্পর্কে মহাভারতেও উল্লেখ রয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় কাশীর বারাণসীতে এক সমৃদ্ধ জনবসতির উত্থান ঘটেছিল। কিন্তু কাশীর এই বৈভব বেশিদিন টেকেনি। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র কোশলের আক্রমণে কাশী তার শক্তিমত্তা হারিয়ে ফেলে।

কোশল মহাজনপদ

কাশীকে বিপর্যস্ত করে ফেলা আরেক প্রাচীন ভারতীয় মহাজনপদ কোশলের অবস্থান ছিল আজকের উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে। এর পশ্চিমে সুমতি, দক্ষিণে সর্পিকা নদী, পূর্বদিকে সদানীরা নদী এবং উত্তরে রয়েছে নেপালের পার্বত্য অঞ্চল। কোশলের রাজধানী ছিল শ্রাবস্তী। অযোধ্যা, সাকেত,  শ্রাবস্তী ছিল কোশলের বড় শহর৷ প্রতিবেশী রাজ্য মগধের উত্থানের আগ পর্যন্ত উত্তর ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র ছিল কোশল। ইতিহাস থেকে জানা যায় কোশলের রাজা মহাকোশল তার মেয়ে কোশলদেবীর সঙ্গে মগধের রাজা বিন্দুসারের বিয়ে দিয়েছিলেন। এর পরবর্তী কোশল রাজা ছিলেন একজন বৌদ্ধ। তার নাম ছিল প্রসেনজিত। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ ও পঞ্চম অব্দে কোশল ছিল অনেক শক্তিশালী এক রাজ্য। গাঙ্গেয় উপত্যকা নিয়ে কাশীর সাথে সংঘর্ষে বিজয়ী হলেও মগধের কাছে পরাজিত হয় প্রাচীন ভারতের শক্তিশালী এ মহাজনপদ।

সুরসেন মহাজনপদ

আধুনিক মথুরার নিকটে ছিল সুরসেন রাজ্যের অবস্থান। সুরসেনের রাজধানী ছিল যমুনা তীরবর্তী মথুরা নগরী। বৈদিক সাহিত্যে এই রাজ্য এবং তার রাজধানীর কোন বর্ণনা না থাকলেও গ্রিক পর্যটকদের বর্ণনায় এই রাজ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়। মহাভারতে মথুরার রাজবংশকে যদুবংশ বা যাদব বংশ বলা হয়েছে। এই অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার ঘটেছিল। মগধ রাজ্যের আক্রমণে সুরসেনও বিপর্যস্ত হয়েছিল। মেগাস্থিনিসের বর্ণনায় সুরসেনকে একটি ধর্মকেন্দ্র হিসেবে দেখতে পাওয়া যায়। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ অব্দে মেগাস্থিনিস যখন ভারতে আসেন তখন মথুরায় ব্যাপকভাবে কৃষ্ণ উপাসনা হত বলে তিনি তার লেখায় উল্লেখ করেন।


তথ্যসূত্র

ভারত উপমহাদেশের ইতিহাস প্রাচীন যুগ-এ কে এম শাহনেওয়াজ

লেখকঃ উবায়দুর রহমান রাজু