সভ্যতা

আধুনিক সভ্যতা থেকে দূরে থাকা কিছু আদিম জনগোষ্ঠী।

সভ্যতা শুক্রবার, ৩১ মে ২০১৯ ০৫:৪২:০৬

আমরা কি ভেবেছি আমাদের এই আধুনিক সভ্যতার ঝকঝকে চকচকে জীবনের বাইরেও আদিম গোষ্ঠী এই পৃথিবীতে এখনো বসবাস করছে?  নৃবিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীতে এখনো প্রায় শতাধিক আদিম জনগোষ্ঠী রয়েছে যাদের ছোঁয়া আধুনিক সভ্যতা পায়নি, কিংবা সেই আদিম গোষ্ঠীই আধুনিক সভ্যতার কাছে আসেনি। এইসব আদিম জনগোষ্ঠী যুগ যুগ ধরে তাদের গোত্রের কৃষ্টি কালচার এখনো বয়ে নিয়ে যাচ্ছে।  এমনো কিছু আদিম গোষ্ঠী রয়েছে যারা হয়তো জানেইনা বর্তমান আধুনিক সভ্যতা কেমন!

চলুন জেনে নেই পৃথিবীর এমন প্রাচীন কিছু আদিম গোষ্ঠী সম্পর্কে যারা আধুনিক সভ্যতাকে অগ্রাহ্য করে তাদের হাজার বছরের সংস্কৃতিকে এখনো তাদের নিজেদের মধ্যে লালন করছে।  

দ্য সেন্টিনেলিজঃ

ভারত ও থাইল্যান্ডের মাঝামাঝি একটি দ্বীপ রয়েছে, যেটির নাম উত্তর সেন্টিনেল আইল্যান্ড। এই দ্বীপের জনবসতি গঠিত হয়েছে মাত্র ২৫০ জন মানুষের দ্বারা। এদের সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় নি কারণ, যে কেউ এদের সাথে দেখা করতে গেলেই বিষাক্ত তীর ছুড়ে মারে! ১৯৬০ সালের দিকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সাথে সাক্ষাত করা একটি ব্যবস্থা নেয়া হয়। তাদের নারকেল দেয়া হয় আবাদ করে নিজেদের খাদ্য সমস্যা মেটাবার জন্য। কিন্তু দেয়া সব নারকেল তারা খেয়ে ফেলে। বীজ হিসেবে কোন কিছুই অবশিষ্ট রাখে না। শূকর প্রদান করা হলে সেটিকে তীরবিদ্ধ করে হত্যা করে। এরপর তা মাটিতে পুঁতে কবর দেয়। যে জিনিসটি তারা সাদরে গ্রহণ করেছিল, তা হচ্ছে লাল রঙের কিছু বালতি। তবে একই আকার বিশিষ্ট সবুজ রঙের বালতি গ্রহণ করতে তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফির একটি দল তাদের সাথে দেখা করতে গিয়ে মারাত্মকভাবে জখম হয়েছিল। তাই অনেকে মজা করে বলেন, সেন্টিনেলদের সাথে দেখা করতে যেতে হলে নিজের সম্পত্তি আগে উইল করে যেতে হবে। প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয়, প্রতিকূল পরিবেশ, খাদ্যের সমস্যা- ইত্যাদি নানা ধরণের সমস্যা থাকার পরেও এতোদিন তারা কিভাবে টিকে আছে, সেটা বিজ্ঞানীদের কাছে একটি বিস্ময়। ২০০৪ সালের সুনামি, যা ইন্দোনেশিয়া এবং শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছিল সেরকম একটি অঞ্চলের মধ্যভাগে হয়েও এরা কি করে টিকেছিলো তাও আরেক বিষ্ময়। ধারণা করা হয় এরা দূর্যোগ মোকাবেলায় অত্যন্ত শক্তিশালী।

দ্য সুরমা পিপলঃ

সভ্যতার কোন সংস্পর্শ ছাড়াই দীর্ঘকাল ধরে ইথিওপিয়ায় বসবাস করছে সুরমা পিপল।  ১৯৮০ সালে রাশিয়ান কিছু ডাক্তার তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সুরমা গোত্রের ব্যক্তিরা ভেবেছিলেন তারা কোন ধরণের ভূত কিংবা জোম্বি। কারণ, তাদের গায়ের চামড়ার রঙ অদ্ভূত! বর্তমানে ইথিওপিয়ার এই সুরমা জাতি সারাবিশ্বের কাছে পরিচিত তাদের বিশালাকার ঠোঁটের কারণে। বলা হয়ে থাকে, প্রমাণ সাইজের একটি ফ্রিসবী (খেলনা চাকতি) অনায়াসেই তারা মুখে ধরতে পারে। সুরমার লোকেরা মূলত দলবদ্ধ হয়ে বাস করতে পছন্দ করে। শত বছরের আধিপত্য, শোষণ, বঞ্চনা- ইত্যাদি সহ্য করবার পর আধুনিক মানুষদের সাথে এরা থাকতে আর স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে নি।

পেরুভিয়ান ট্রাইবঃ

একবার কিছু অভিযাত্রী পেরুর জঙ্গলে ঘুরতে গিয়ে কিছু অদ্ভুত রকমের মানুষের দেখা পায় তারা, যাদের তারা আগে কখনো দেখেনি এমনকি তাদের সম্পর্কে আগে কোথাও শোনেওনি। সেই অভিযাত্রী দল এই গোষ্ঠির সাথ কথাবার্তা বলার চেষ্টা করেন, কিন্তু তারা কিছুতেই একে অপরের ভাষা বুঝতে পারছিলেন না। পরে ঐ অভিযাত্রী দল হাল ছেড়ে দিয়ে ফিরে আসে। সৌভাগ্যবশত অভিযাত্রী দলের একজন ঐ ট্রাইবের সাথে কথাবার্তা ও তাদের দেখার অংশ ভিডিও করে নেন। পরবর্তীতে এই ভিডিও নিয়ে আলোচনা হলে পেরু সরকার এই ভিডিও দেখেন, বুঝতে পারেন যে প্রত্নতাত্ত্বিক ও নৃতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে পেরুর এই গোত্রের কথা কখনো তাদের জানা হয়ে ওঠে নি। পরবর্তিতে ঐ নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীকে নিয়ে অনেক গবেষণা পরিচালিত হয়।

দ্য ভিয়েতনামিজ রুখঃ

সাধারণত আদি গোষ্ঠিরা নিজেদের বাসস্থান কৃষ্টি কালচার থেকে সরে আসতে চায়না। যুগে যুগে না চাইলেও বিভিন্ন সময় সেই সব আদিগোষ্ঠীর অনেককেই আধুনিক সভ্যতার ছায়ায় চলে আসতে হয়। এমনই এক আদিম গোষ্ঠী দ্যা ভিয়েতনামিজ রুখ।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় আমেরিকা ভিয়েতনামে তাদের ইচ্ছেমত ধ্বংস সাধন করেছে। একদিন ভিয়েতনামের এক জঙ্গলে মার্কিন বাহিনীর মুহুর্মুহু বোমা বর্ষণে ভিয়েতনামিজ সৈন্যরা অবাক হয়ে দেখলেন যে, জঙ্গল থেকে ধীরে ধীরে কিছু মানুষ লোকালয়ের দিকে বেরিয়ে আসছে। ভিয়েতনামিজ সৈন্যরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন এই মানুষগুলোকে তারা আগে কখনো দেখেনি এমনকি তাদের সম্পর্কে আগে কোথাও শোনেওনি।  সভ্যতার সাথে রুখদের সাথে সেটিই প্রথম যোগাযোগ। নিজেদের আবাস ধ্বংস হয়ে যাবার কারণে তারা মূলধারার মানুষের সাথে বসবাস করতে শুরু করে। কিন্তু শত বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি এখনো নিজেদের মাঝে লালন করে চলেছে রুখরা।

 ব্রাজিলীয় আদিবাসী

জনসংখ্যা গণনার নিমিত্তে ব্রাজিল সরকার তাদের বিশাল আমাজন বনে কত মানুষ বসবাস করে তার রিপোর্ট গ্রহণের চেস্টা করেন। আমাজনের যেসব অঞ্চলে সাধারণ মানুষের হেটে পৌঁছানো সম্ভব নয়, সেসব জায়গায় হেলিকপ্টারের মাধ্যমে প্রায়ই খোঁজ পাঠানো হতো কোথাও কোন মানূষের অস্তিত্ব আছে কিনা! থাকলে তার সংখ্যা কত! এরকম খোঁজে আর উদ্ধারের নিমিত্ত্বে প্রায়ই আমাজনের নানান জায়গায় উড়ে বেড়ায় হেলিকপ্টার। তাদের কাছে ছবি তোলার সরঞ্জাম সব সময়ই থাকে।

২০০৭ সালে আমাজনের উপর দিয়ে অপেক্ষাকৃত নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় এরকমই একটি হেলিকপ্টার একটি অজানা আদিবাসী গোত্রের আক্রমণের শিকার হয়। মজার ব্যাপার হলো, তারা হেলিকপ্টারটিকে অজানা কোনো শত্রু মনে করে তীর-ধনুক দিয়ে আক্রমণ করছিল। তারপর ২০১১ সালে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেখা যায় যে, আমাজনের কিছু দুর্গম জায়গা, যেখানে কেউ ভাবেনি কোনো মানুষ বসবাস করতে পারে, সেখানে কিছু আদিবাসী এখনও দিব্যি জীবনযাপন করছে।

তথ্যসূত্রঃ https://listverse.com/2013/01/24/10-tribes-that-avoided-modern-civilization/


লেখকঃ এস এম সজীব